মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামায় চাঞ্চল্যকর কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে নিহত মাজেদা বেগমের মা লাল মতি বেগম (৬০) শনিবার বিকেলে একটি হত্যা মামলা রুজু করেছে লামা থানা পুলিশ। মামলা নং- ০৮, ধারা- ৩০২/৩৪, তারিখ:২২ মে ২০২১ইং।
এদিকে নৃশংস এই ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার রাতে পাঁচ জনকে ও শনিবার সকালে স্থানীয় এক যুবককে সহ মোট ছয় জনকে লামা থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। শনিবার ভোর রাতে লাশটি তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের শনিবার বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ তিনটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- নিহত মাজেদা বেগমের দেবর মোঃ শাহ আলম (৪৩) ও মোঃ আবদুল খালেক (৪০), নিহতের বড় বোন রাহেলা বেগম (৪০), তার স্বামী মোঃ আবদুর রশিদ (৪৮), হাফেজ সায়েদুর রহমান (১৮) ও স্থানীয় যুবক মো. রবিউল হোসেন (২১)।
কুয়েত প্রবাসী নুর মোহাম্মদ এর মেয়ে রাবেয়া ইয়াছমিন (২২) বলেন, আমার ছোট মা মাজেদা বেগমকে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে, ছোট বোন নুরে জান্নাত রিদাকে গলা টিপে ও মেজো বোন সুমাইয়া ইয়াছমিন রাফিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের সবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে।
রাবেয়া ইয়াছমিন আরো বলেন, ধনসম্পদ লুটের কারণে এই খুনের ঘটনা সংঘটিত হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার আমার মা তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ২ লক্ষ টাকা তোলে। আমার ধারনা খুনিরা হয়ত পরিচিত হবে। না হলে তারা অনায়াসে ঘরে কিভাবে ঢুকবে? জোর করে ডুকলে ঘরের লোকজন চিৎকার দিলে আশেপাশে মানুষ এগিয়ে আসত। তাছাড়া এমনও হতে পারে, খুনিরা হয়ত আগে থেকে ঘরে ঢুকে ওঁত পেতে ছিল।
বান্দরবানের র্যাব-১৫ এর কোম্পানী কোমান্ডার এএসপি নিত্যান্দ দাস সাংবাদিককে জানান, আমরা যাদের সন্দেহ করছি ইতোমধ্যে তাদের অনেককে পুলিশ আটক করছে। খুব শীঘ্রই হত্যার ঘটনার ক্লু বের হবে।
লামা পুলিশ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রিজওয়ানুল ইসলাম ও লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, প্রবাসীর ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে দেখি মা মেয়েসহ ৩ জনের লাশ খাটে ও মেঝেতে পড়ে আছে। লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোর ৪টার দিকে বান্দরবান পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, ঘরের আলমিরা, ওয়ারড্রপ খুলে স্বর্ণালংকার লুটপাটের আলামত পাওয়া গেছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে লামা থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আলমগীরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নৃশংস ও চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা সরজমিনে পরিদর্শন করতে বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরিন আখতার শনিবার বিকেল ৪টায় লামায় আসেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টা ১৫ মিনিটে লামা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চাম্পাতলী গ্রামে কুয়েত প্রবাসী ও মৃত বাচা মিয়ার ছেলে নুর মোহাম্মদের বসতঘর থেকে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
You must be logged in to post a comment.