সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ধর্মীয় / ফিতরা; কে কাকে কখন দেবেন

ফিতরা; কে কাকে কখন দেবেন

অনলাইন ডেস্ক :

ঈদ আসলেই প্রাসঙ্গিক হিসেবে উঠে আসে সদকাতুল ফিতরের আলোচনা। ফিতরা আরবী শব্দ, যা ইসলামে জাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতর নামে পরিচিত। ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয়, যা দ্বারা রোজাদাররা রোজা ভঙ্গ করেন। সোজা কথায় ফিতরা হলো এমন খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দ্বারা গরিব দুঃখীরা ইদের দিনে খেয়ে খুশি হয়। আর এই দান প্রতিটি সাওম পালনকারীকেই প্রদান করতে হবে।

নবীজি ইরশাদ করেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত সদকাতুল ফিতর আদায় করা না-হয়, ততক্ষণ আসমান ও জমিনের মাঝখানে রোজা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে”। —কানজুল ওম্মাল, হাদিস: ২৪১২৪।

ঈদের দিন সকালেই ফিতরা দেয়া সুন্নাত। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজের জন্য বের হবার পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিতেন।” (সহিহ বুখারি: ১৫০৯)।

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় মূলত ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পরপর। হাদিসের ভাষ্যমতে সুবহে সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাজের আগে দেওয়াই উত্তম। তবে এ-সময়ে দেয়া সম্ভব না-হলে এর আগে বা পরেও দেয়া যাবে। (বাহারে শরীয়ত, আলমগীরী প্রভৃতি।)

ইসলামে সম্পদের পবিত্রতার জন্য যেমন জাকাত (দান) দিতে হয়, ঠিক তেমনি রমাদানের সিয়ামের পবিত্রতার জন্য সাদকাতুল ফিতর (দান) দিতে হয়। আরও সহজ করে বললে বলতে হয়, পবিত্র রমাদানে সিয়াম পালন করতে গিয়ে প্রতিটি মানুষেরই অবচেতনমনে কোনো না কোনো ভাবে সিয়ামের অনেক সাধারণ ভুলত্রুটি (যেমনঃ সাওমে অবাঞ্ছনীয় অসারতা, গীবত করা, অশ্লীল কথাবার্তা, গালাগালি করাসহ নানান ছোটখাটো সগিরা গুনাহ) হয়ে থাকে। সিয়াম পালন করতে গিয়ে সেই ত্রুটি-বিচ্যুতিরই ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনী হচ্ছে সাদকাতুল ফিতর। যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দানের একটি ইবাদত। জাকাত যেমন অর্থ-সম্পদকে পবিত্র করে, ঠিক তেমনি ফিতরাও সাওমকে পবিত্র করে।

সুতরাং ঈদের দিন সকালে জন্মগ্রহণ করা শিশুর পক্ষ থেকেও তা আদায় করতে হবে। পুরুষ অভিভাবক তার নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবে; তবে মায়ের দায়িত্বে থাকা নাবালেগ সন্তানদের ফিতরা দেয়া তার উপর ওয়াজিব নয়। পিতা না থাকলে সন্তানদের দায়িত্ব পিতামহ বা দাদা গ্রহণ করবে; যদি দাদা বেঁচে থাকে। বালেগ সন্তানের দায় পিতার উপর নেই, তবে আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে। কোনো কারণে রোজা রাখতে না-পারলেও ফিতরা আদায় করতে হবে। (বাহারে শরিয়ত, রদ্দুল মুখতার, আলমগীরী প্রভৃতি।)

যাদের জাকাত দেয়া যায়, তাদের ফিতরাও দেয়া যাবে। অর্থাৎ, সকল প্রকার গরিব, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির ও হতদরিদ্রদের ফিতরা দেয়া যাবে। তবে ফিতরা উত্তোলনকারী (নিয়োজিত ব্যক্তি) এ পর্যায়ে পড়বে না। তবে সে যদি জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়, তাকেও ফিতরা দেয়া যাবে। (রদ্দুল মুখতার, বাহারে শরিয়ত)

যারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব। ওয়াজিব মানে আবশ্যক। অবশ্যই দিতে হবে এমন। এটির নেসাব জাকাতের নেসাবের মতো। নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকা। তবে এক্ষেত্রে একবছর স্থায়ী হওয়া শর্ত নয়। ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় ঐ পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার উপর ফিতরা ওয়াজিব। ফিতরার জন্য বালেগ হওয়া শর্ত নয়।

ফিতরা সেই মুসলিমের উপর ফরয যে ব্যক্তির ইদের রাত ও দিনে নিজের এবং পরিবারের আহারের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর এই সাদকা হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকেই হিসাবে রাখতে হবে।

একটি পরিবারে স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট, বড়, বাচ্চা, ধনী ও গরিব, শহরবাসী ও মরুবাসী সিয়াম পালনকারী, ভঙ্গকারী ইত্যাদির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এক কথায় এ দান পরিবারের সকল সদস্যকে হিসাবে রেখে, পরিবারে যতজন সদস্য আছে ততজনের ফিতরা আদায় করতে হবে। সাদকাতুল ফিতর ফরয হওয়ার জন্য জাকাতের সমপরিমাণ নিসাব হওয়া শর্ত নয়। যেহেতু তা ব্যক্তির উপর ফরয, সম্পদের উপর নয়।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান এক সা সমান প্রায় চার কেজি একশ গ্রাম। সুতরাং অর্ধ সা সমান দুই কেজি পঞ্চাশ গ্রাম। মহামারি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যসঙ্কট দেখা দিলে খাবার দিয়ে আদায় করাই উত্তম। তখন ঐ অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসে যেটি অগ্রগণ্য, খেজুর বা যবের টাকা হিসাব করে ঐ টাকায় যতটুক পরিমাণ প্রয়োজনীয় খাদ্য পাওয়া যায়, তা-ই দিতে হবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর কালিরছড়ায় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে প্রার্থী হলেন নুরুল আমিন

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অসহায় ও হত দরিদ্র মানুষের মুখে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/