সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / বাঘাইছড়ির ঘটনা কক্সবাজারে পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করলে কঠিন পরিণতি : এসপি মাসুদ

বাঘাইছড়ির ঘটনা কক্সবাজারে পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করলে কঠিন পরিণতি : এসপি মাসুদ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি জেলার বাঘাইছড়ির ঘটনা কেউ পূণর্রাবৃত্তির কোন চিন্তা করলে সেটা হবে মারাত্মক ভূল। এধরনের চিন্তা করার আগেই আইনের কঠিন পরিণতি ভোগ করার জন্য তাদের তৈরী থাকতে হবে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে কোন ধরণের সন্ত্রাস সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের উদ্দ্যেশে এই হুশিয়ারী প্রদান করেন। তিনি বলেন, গত ১৮ মার্চ চকরিয়া উপজেলায় যে ভাবে নিরাপদ ও শান্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে- জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলোতেও অনুরূপ পরিবেশে ভোট গ্রহন করা হবে ইনশাল্লাহ্।

শুক্রবার ২২ মার্চ বিকেলে টেকনাফ উপজেলার বাহারছরা ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বিপিএম-বার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাদক, জঙ্গী ও সন্ত্রাস বিরোধী এক সমাবেশে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম ইয়াবাবাজ, ইয়াবাবাজদের পৃষ্টপোষকতাকারী, ইয়াবাবাজদের আত্মীয়-স্বজন, যে কোনভাবেই হোক ইয়াবাবাজদের সহায়তাকারীদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী থাকলে তাদের ভোট নাদেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন-তারা দেশ ও জণগণের শত্রু। ইয়াবাবাজদের ভোট দেয়া মানেই নিজের দেশের সাথে নিজেই শত্রুতা করা। তিনি ইয়াবা ও হুন্ডিবাজদের আবারো আত্মসমর্পনের আহবান জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ নাকরলে তাদের চুড়ান্ত পরিনতি ভোগ করতে হবে।

তিনি বলেন-টেকনাফের দু’লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে। তারমধ্যে, সর্বোচ্চ মাত্র দু’হাজার মানুষ ইয়াবাবাজী ও হুন্ডিবাজীতে জড়িত। দেশের ১৬ কোটি মানুষ ও রাষ্ট্র মাত্র এই ২ হাজার মানুষের কাছে কখনো জিম্মি থাকতে পারেনা। এখানে ইয়াবাবাজ ও হুন্ডিবাজদের সুষ্ঠুভাবে এখানে বসবাস করতে দেয়া হবেনা। কারণ ভালমানুষ আর ইয়াবাবাজ একসাথে থাকতে পারেনা।

তিনি বলেন- এখানে হয়, ভাল মানুষ থাকবে-নাহয় ইয়াবা ও হুন্ডিবাজ থাকবে। এখানকার অনেক নামীদামী মানুষ মুখোশ পড়ে ইবাবাবাজী ও হুন্ডিবাজি করছে। তাদের হাড়ির খবরও পুলিশের কাছে রয়েছে। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন-স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার এলাকার মানুষ কে কি কাজ করে, কোথায় যায়, কিজন্য যায়-সবই জানে। তাদের অনেকেই ভোট ও আর্থিক সুবিধা পাওয়ার লোভে ইচ্ছে করেই ইয়াবা ও হুন্ডিবাজদের তথ্য দিচ্ছেনা। জনপ্রতিনিধিরা যদি ইয়াবা ও হুন্ডিবাজদের বিষয়ে রাষ্ট্রকে তথ্য দিয়ে সহায়তা নাকরে তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন-টেকনাফের মানুষ এখন নিজেদের টেকনাফের নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করে। আর যদি টেকনাফ ও আশেপাশের এলাকাকে ইয়াবা, হুন্ডি ও মাদকমুক্ত করা যায়-তাহলে ইয়াবানগরী হিসাবে টেকনাফের দুর্নাম অনেকটা ঘুুছে যাবে। তিনি বলেন-ইয়াবা ও হুন্ডিবাজী করে অর্জিত সম্পদ শুধু ইয়াবাবাজেরা নয় তাদের পরবর্তী কোন প্রজম্মও ভোগ করতে পারবেনা। রাষ্ট্র সে প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে আইনীভাবে শুরু করে দিয়েছে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন-গত কয়েক মাসে ইয়াবাবাজেরা নিজেদের মধ্যে ভাগবন্ঠনের বিরোধের কারণে গোলাগুলি ও বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত শুধু টেকনাফে অর্ধশতাধিক ইয়াবাবাজ ও হুন্ডিবাজ নিহত হলেও টেকনাফ এলাকায় এতে কোন আতংক সৃষ্টি হয়নি। ইয়াবাবাজী ও হুন্ডিবাজি অনবরত চলছেই। অথচ অন্য কোন এলাকায় একজন লোক নিহত হলে সে এলাকটির সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা আতংকিত হয়ে পালিয়ে যায় এবং সে এলাকাটি কমপক্ষে একমাস শান্ত থাকে। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন-সরকারি চাকুরীর সহজাত নিয়মে আমরা একসময় কক্সবাজার থেকে বদলী হয়ে যাবো। সে কারণে চাকুরীজীবী হিসাবে আমাদের উপর মাদকের দুর্নাম রটানো যাবেনা। আর টেকনাফবাসীকে ইয়াবানগরীর বাসিন্দার দুর্নাম সর্বত্র এখন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কক্সবাজারের বাইরে বসবাসকারী টেকনাফের ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরীজীবী, সকল পেশাজীবী সহ সর্বস্থরের টেকনাফবাসী নিজেদের পরিচয় দিতে এখন বিভ্রতবোধ করেন। তিনি বলেন-কিছুদিন আগে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে আমার গাড়ি থামিয়ে কিছু ছাত্র আমাকে একটি দরখাস্ত দেয়।

দরখাস্তে করুণভাবে লিখা রয়েছে-আমাদের কেউ বাসা ভাড়া দেয়না, অন্যান্য এলকার ছাত্ররা আমাদের একসাথে ছাত্রাবাসে রাখতে ভয় পায়। তারা বলে-“তোরা হলি টেকনাফের বাসিন্দা, কখন জানি আবার ইয়াবাসহ ধরা খাছ।” এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন-ইয়াবাবাজ-হুন্ডিবাজ কেউ পার পাবেন না। কেউ যদি মনে করে, কারো মাধ্যমে তদবির করে কেউ পার পেয়ে যাবেন-তাহলে সেটা ভূল ধারণা। ইতিমধ্যে ইয়াবা ও হুন্ডিবাজের অনেক তদবির ব্যর্থ প্রমান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের সকল বাহিনী এখন একাত্ম। তাই আইনের জালে ইয়াবা ও হুন্ডীবাজদের পড়তেই হবে। তিনি প্রবাদ বাক্য চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন উল্লেখ করে বলেন-তাদের ধ্বংস অনিবার্য। গ্রামে গ্রামে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ড মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে উল্লেখ করে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম নবীনদের উদ্দেশ্য বলেন-যদি দেখেন আপনার অভিবাবক হঠাৎ করেই বেশী পয়সাওয়ালা হয়ে গেছে, তাহলে আপনি আপনার অভিবাবককে প্রশ্ন করবেন, জানতে চাইবেন-এটা কিভাবে সম্ভব হলো? কারণ আপনার অভিবাবক যে প্রজম্মের জন্য অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করছে সে প্রজম্ম ঘৃনা আর নিগ্রহ নিয়ে কখনো বেঁচে থাকতে পারেনা। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন-পুলিশের কোন সদস্য যদি ইয়াবাবাজ, হুন্ডিবাজদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়, পরোক্ষভাবে হলেও এসব অপকর্মের সাথে জড়িত থাকে তার সুনিদিষ্ট প্রমান সহ তথ্য দিলে, তাকে পুলিশের ড্রেস খুলে সাদা পোশাক পরিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের মতো আইনের কঠোর আওতায় আনা হবে। পুলিশের শামলাপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইনস্পেকটর আনোয়ার হোসেন (নিরস্ত্র) এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শামলাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ক্বারী মাওলানা ইউসুফের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া উক্ত সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন-জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, প্রখ্যাত অভিনেতা ইলিয়াছ কোবরা, শামলাপুর হাই স্কুলের স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক এম.এ মন্ঞ্জুর, শামলাপুর কমিউনিটি পুলিশের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট সমাজকর্মী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রমুখ। সমাবেশে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিশিষ্টজন, পেশাজীবী সহ প্রচুর জনসমাগম ঘটে। প্রসঙ্গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত সমাবেশটি টেকনাফ উপজেলার পন্ঞ্চম মাদকবিরোধী সমাবেশ।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

লামায় দিনেদুপুরে কৃষকের বাড়িতে হামলা লুটপাট

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; বান্দরবান :ভূমি বিরোধের জের ধরে লামায় মোঃ ইব্রাহিম (৫৫) নামে কৃষকের ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/