মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শীলপাড়া গ্রামে রভা রানী শীল (২৫) নামের গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ওই গৃহবধূ বাবার দাবি, যৌতুক না পেয়ে তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন। মারা যাওয়া গৃহবধূ ৪ বছর বয়সি এক ছেলে সন্তানের জননী ও সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রামের সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়ার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়।
রভা রানী পেকুয়া উপজেলার শীলপাড়ার আশীষ চন্দ্র সুশীলের স্ত্রী। রভা রানীর বাবার বাড়ি মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায়। আশীষ সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। তিনদিন আগে তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন বলে জানা গেছে।
মারা যাওয়া গৃহবধুর বাবা বনমালী শীল থানায় দেয়া এজাহারে দাবী করেন, পাঁচ বছর পূর্বে তাঁর মেয়ে রভা রানীর সঙ্গে পেকুয়া শীলপাড়ার হারাধন চন্দ্র সুশীলের ছেলে আশীষ চন্দ্র সুশীলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আশীষ দুই লাখ টাকার জন্য তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করে আসছিল। মেয়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক বছর পূর্বে আমার বাড়িতে চলে আসে। পরে আমার মেয়েকে আর নির্যাতন করবে না মর্মে আশীষ অঙ্গীকার দিলে রভারানী শ্বশুরবাড়িতে যায়।
বনমালী শীল অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার রাতে আশীষ যৌতুকের জন্য রভা রানীকে মারধর করে। এতে রভা রানী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে যায়। এরপর আশীষ তাকে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা। পরে বায়েজিদ থানার পুলিশ সিএমএইচ থেকে লাশ উদ্ধার পূর্বক থানায় জিডি করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।
এঘটনায় বক্তব্যের জন্য আশীষ চন্দ্র সুশীলকে তাঁর বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর বড় ভাই প্রদীপ চন্দ্র সুশীল সাংবাদিকদের বলেন, মেঝেতে পড়ে অসুস্থ হলে রভা রানীকে হাসপাতালে নেওয়া যাওয়া হয়। সেখানে রভা রানী শীল মারা যান। তাকে কেউ নির্যাতন করেনি। মেয়ের পরিবারের অভিযোগ মিথ্যা বলেও দাবি করেন প্রদীপ। আশীষের বক্তব্য নিতে ফোন নাম্বার চাইলে তার কাছে নাই বলে এড়িয়ে যান।
রভা রানীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য আরো ঘনিভুত হয় পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের বক্তব্যে। ওই চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, রাতে রভা রানী সন্তান প্রসব করবে দাবি করে তার কাছে নিয়ে যায়। রোগীর অবস্থা দেখে না দেখেই চকরিয়া বা চট্টগ্রামের কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, রাতে হত্যার কোন কথা শুনলে আমি চিকিৎসা না করলেও রোগী দেখতাম।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জহিরুল ইসলাম খান বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুরহস্য জানা যাবে। লাশ না পুড়িয়ে আপাতত মাটির গর্তে হেফাজতে রাখা হবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর রভা রানীর মরদেহ তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বনমালী শীল বাদি হয়ে রভা রানীর স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ ৯জনকে অভিযুক্ত করে থানায় দেয়া এজাহারে দাবি করা অভিযোগের তদন্ত চলছে। তাছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে যদি হত্যার কোন আলামত পাওয়া যায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
You must be logged in to post a comment.