![](https://i0.wp.com/coxview.com/wp-content/uploads/2018/01/Anisul-Hoque-law-minister.gif?resize=620%2C348&ssl=1)
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ছবি
বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয়ের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে বিচার বিভাগের জন্য আদালা সচিবালয় নেই। বিশ্বের ১৯৩টি গণতান্ত্রিক এবং অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোথাও বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় নেই। আমার মনে হয়, আলাদা সচিবালয়ের দাবিটা অযৌক্তিক।’
৭ জানুয়ারি রোববার বিচার প্রসাশন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নিম্ন আদালতের বিচারকদের এক অনুষ্ঠান শেষে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয়ের দাবি রাখেন। গত ৩ জানুয়ারি অধস্তন বিচারকদের জন্য শৃঙ্খলাবিধি সর্বোচ্চ আদালত থেকে গৃহীত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে মাসদার হোসেন মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবলায় প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রীর নিকট জানতে চায়।
আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয়ের কথা যেটা বলা হচ্ছে। সেখানে আমি দুটো কথা বলি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পরে এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরে বাংলাদেশে একটা ইন্ডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল। সেটা কিন্তু ২১ বছর বিদ্যমান ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পরেও কোনো মামলা হয়নি। কেউ স্বপ্রণোদিত হয়েও রিট দায়ের করেননি। অনেকেই বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধানের যে ১১৬ অনুচ্ছেদ ছিল তাতে ফিরে যেতে এবং আলাদা বিচারিক সচিবালায় করতে। এ বিষয়ে প্রথমে বলতে চাই এই সব প্রেক্ষাপটে আমাদের মনে হয় যেই অবস্থা বিদ্যমান আছে সেটাই বিচার বিভাগের জন্য শ্রেয়।
প্রসঙ্গত, ১০ বছর আগে ২০০৭ সালে ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথকী হয়। ওই মামলায় সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার আদেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই নির্দেশনার মধ্যে একটি ছিল বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবলায়।
১২ দফা নির্দেশনা হলো-
১. সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের কাজ সার্ভিস অব রিপাবলিকের ভেতরে পড়বে। তবে বিচার বিভাগের কাজ ও অবকাঠামোর সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসের অনেক ভিন্নতা রয়েছে। বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একত্রিত করা যাবে না।
২. বিচারিক (জুডিশিয়াল) ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না। সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের পদ সৃষ্টি, নিয়োগ পদ্ধতি, নিয়োগ বদলিসহ অন্যান্য কাজের বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারবেন।
৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী সব ম্যাজিস্ট্রেটকে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়। একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সংবিধান পরিপন্থী।
৪. এই রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা এবং কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। এই কমিশনে নারী ও পুরুষ বলে কোনও বৈষম্য থাকবে না।
৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়ারির সবার চাকরির বিধিমালা (নিয়োগ, পদায়ন, বদলি পদোন্নতি ও ছুটিসহ অন্যান্য) প্রণয়ন করবেন।
৬. সংবিধানের ১১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন করবেন।
৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে।
৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবেন।
৯. জুডিশিয়ারির (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনও হাত থাকবে না। এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন এবং বরাদ্দ করবে।
১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন।
১১. এই রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের জন্য সংবিধানে কোনও সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। তবে পৃথকীকরণ আরও অর্থবহ করতে যদি সংবিধানের সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে তা করা যাবে।
১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন: জুডিশিয়াল পে-কমিশন জুডিশিয়ারির সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ না করবে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান অবকাঠামো অনুযায়ী তার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
সূত্র:priyo.com;ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.