সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ভ্রমণ ও পর্যটন / ভ্রমণের আরেক নাম বিছানাকান্দি

ভ্রমণের আরেক নাম বিছানাকান্দি

অনলাইন ডেস্ক :
জলপাথরের বিছানার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ পর্যটন গন্তব্যটির নাম বিছানাকান্দি। প্রকৃতি কন্যা সিলেট ভ্রমণ পিপাসুদের অত্যন্ত পছন্দের একটি নাম। দূর থেকে দেখলে মনে হয় আকাশ আর মেঘের সাথে পাহাড় মিশে আছে। যতই কাছে যাই, পাহাড়গুলোর ততই আকাশ থেকে যেন দূরে যেতে থাকে। শুভ্র মেঘের চাদরে ঘেরা চেরাপুঞ্জি আর মেঘালয়ের সবুজ পাহাড় থেকে উৎসারিত প্রাণবন্ত ঝর্ণার জলধারার নিচে বিস্তৃত পাথুরে বিছানায় সজ্জিত স্বর্গীয় সৌন্দর্যের আরেক নাম বিছানাকান্দি।

বিছনাকান্দি (Bisnakandi) বাংলাদেশের উত্তর পুর্বাঞ্চলের সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের রস্তুমপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। এটি সিলেটের পর্যটন স্বর্গ। দেশের সীমান্তঘেরা পাথরের বিছানা ও মেঘালয় পাহাড় থেকে আসে ঠাণ্ডা পানি। পাশেই পাহাড়ি সবুজের সমারোহ। ছোট বড় পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা বিছানাকান্দিতে সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ। নদীর ধার ঘেঁষে মাঝে মধ্যে উঁচু করে স্তূপ আকারে জমিয়ে রাখা হয়েছে সাদা-কালো ও বাদামি পাথরের চাঁই। মনে হবে, সবুজ পাহাড়ের কোলে আরেক সাদা পাহাড়।

কখন যাবেন :
সাধারণত পুরো বছরজুড়েই বিছানাকান্দিতে পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়। বিছানাকান্দিতে বছরের যে কোন সময় ভ্রমণ করতে পারেন। তবে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। কেননা এ সময় বিছানাকান্দিতে প্রচুর পানি পাওয়া যায় যা এই স্থানটির প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করে। এসময় চারদিকে পানি থাকায় এর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। শীত মওসুমে বিছানাকান্দির আসল সৌন্দর্য পাওয়া যায় না। তখন পাথর উত্তোলনের কারণে ভ্রমণে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

কিভাবে যাবেন :
দেশের যেখানেই থাকেন আপনাকে প্রথমে সিলেট জেলা শহরে আসতে হবে বিছনাকান্দি যাবার জন্যে। রাজধানী ঢাকা অথবা বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে বাস, ট্রেন কিংবা বিমানযোগে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন সিলেটে।

চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে সিলেট যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে অথবা বাই প্লেনে আপনি সিলেট যেতে পারবেন। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ, গাবতলি ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এ পথে গ্রিন লাইন পরিবহন, এনা পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস এর এসি ও নন-এসি বাস চলাচল করে। এছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকেও আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস এ চড়ে যেতে পারেন সিলেটে। সিলেট শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি গ্রাম। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক ধরে সালুটিকর বাজারের ডান দিকে গাড়ি নিয়ে গোয়াইনঘাট লিংক রোডে হয়ে দেড় ঘণ্টা গেলেই আপনি পৌঁছে যাবেন বিছানাকান্দি অথবা প্রথমে আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। এ ক্ষেত্রে শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি নিলে সহজে এবং কম খরচে বিছানাকান্দি যাওয়া যায়। সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপাড় নামক জায়গা পর্যন্ত গেলে ভালো হয়।

হাদারপাড় বাজারেই এক নৌকায় বিছানাকান্দি, পান্থুমাই ও লক্ষনছড়া ঘুরে দেখানোর জন্য ঠিক করে নেবেন। বাজারের পাশেই খেয়াঘাট। ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দি। দর কষাকষি করে এক হাজার টাকার মধ্যে নৌকা রিজার্ভ করা যায়।

কোথায় থাকবেন :
সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব কম হওয়ায় আপনি দিনে গিয়ে দিনেই সিলেট শহরে ফিরে আসতে পারবেন। তাই থাকার জন্য সিলেট শহরকে বেছে নিতে পারেন। সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনটিতে থাকতে পারেন। এসব হোটেলের বেশীরভাগ মাজার রোড, আম্বরখানা এবং জিন্দাবাজারে অবস্থিত। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল- লা ভিস্তা হোটেল, হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ব্রিটানিয়া, গুলশান, সুরমা, কায়কোবাদ, শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন, জেল সড়কে হোটেল ডালাস, ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন, লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন, আম্বরখানায় হোটেল পলাশ, দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট, হোটেল উর্মি, জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট, তালতলায় গুলশান সেন্টার, হোটেল স্টার প্যাসিফিক। এছাড়া লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউজ আছে। নলজুড়ি উপজেলা সরকারি ডাকবাংলোঃ পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে এইখানে থাকতে পারেন।

প্রয়োজনীয় সতর্কতা :
বিছনাকান্দিতে পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন। যেসব ভ্রমণস্থলে জলাধার, নদী অথবা হ্রদ রয়েছে, অন্য স্থানের তুলনায় এসব স্থানে সতর্কতা একটু বেশি অবলম্বন করা উচিত, কেননা একটি দুর্ঘটনা আপনার ভ্রমণের সবটুকু আনন্দ কেড়ে নিতে পারে। এখানে পানিতে নামতে হলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। সীমান্তের ওপাড় থেকে আসা স্রোতের বেগ অনেক বেশী ক্ষিপ্র থাকে। এ স্রোতে না বুঝে নেমে পড়লে পাথরের ফাঁকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কিছু জায়গায় পাথর উত্তোলনের ফলে নিছে গভীর খাঁদ আছে, কোথাও নামার আগে পরামর্শ নিন। বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারী, চারাপাশে পাথর, পানির নিচেও পাথর, তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন। ভ্রমণের সময় অবশ্যই মনে রাখবেন আপনার দ্বারা এমন কোন কাজ যেন না ঘটে যা আমাদের প্রকৃতি, পরিবেশ এবং আমাদের পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি স্বরুপ। পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন। সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।

সীমান্ত হাট :
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হাট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সীমান্ত বাণিজ্য বাজার। প্রতি চার দিন পর পর বিছানাকান্দি পাহাড়ের ধারে বর্ডার হাট বসে। সীমান্ত হাটগুলিতে বাণিজ্য ভারতীয় রুপি / বাংলাদেশ টাকায় এবং বস্তু বিনিময়-এর ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং এই ধরনের তথ্য সংশ্লিষ্ট সীমান্ত হাটের হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। বিছানাকান্দি সীমান্ত হাট থেকে আপনারা অল্প দামে ভারতের বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। সাধারণত বিছানাকান্দি সীমান্ত হাট সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে। তবে বর্ডার হাট থেকে পণ্য কেনার পূর্বে যাচাই করে নিতে ভুলবেন না।

কোথায় খাবেন :
বিছনাকান্দিতে স্থায়ী ভাল মানের হোটেল না থাকায় আপনাকে বিছানাকান্দির অস্থায়ী খাবার হোটেলে খাবার খেতে হবে। বিছানাকান্দি গেলে হাদারপার বাজারেই ছোটখাটো কিছু খাবার হোটেল পাবেন যেগুলোতে আপনারা সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদামত সবকিছুই পাবেন। সিলেট এর জিন্দাবাজার এলাকার রেস্টুরেন্টে সুলভ মূল্যে পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারেন। এছাড়াও এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে অনেক রকম ভর্তা ভাজি পাওয়া যায় বলে সবার কাছে খুব জনপ্রিয়।

প্রয়োজনীয় কিছু ভ্রমণ টিপস :

  • বিছানাকান্দি ভ্রমণে যাওয়ার সময় মোটামুটি সকাল সকাল রওনা দেয়ার চেষ্টা করবেন।
  • সিএনজি বা নৌকা ভাড়া ঠিক করার সময় প্রচুর দরদাম করবেন।
  • ভ্রমণকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রতারক চক্রের প্রতারণা এড়িয়ে চলার প্রস্তুতি রাখবেন।
  • পানিতে খাবারের প্যাকেট, ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
  • সেখানে গিয়ে গোসল করার মত প্রয়োজনীয় সামগ্রী সাথে নিয়ে নিবেন।
  • সাঁতার না জানলে বিছানাকান্দিতে বা যেকোন স্থানে পানিতে নামা থেকে বিরত থাকবেন।
  • পাথরে চলার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। নয়তো পা পিছলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
  • বিছানাকান্দি যেহেতু বর্ডারের পাশে অবস্থিত তাই ঘোরার সময় সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

পরামর্শ :

  • যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে যথাস্থানে ফেলবেন।
  • স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
  • সর্বদা সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
  • যেকোনো সমস্যায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন।
Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/04/Thermometer-Hit-Hot.jpg

বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, রাতে বাড়বে গরম

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকাসহ দেশের কোনো বিভাগেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/