সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / মূল্য নিয়ে চাষীরা শংকায় : কুতুবদিয়ায় লবণ উৎপাদন পুরোদমে শুরু

মূল্য নিয়ে চাষীরা শংকায় : কুতুবদিয়ায় লবণ উৎপাদন পুরোদমে শুরু

Salt - Kutubdia 19-11-2015-1এম. রাসেল খাঁন জয়; কুতুবদিয়া:

কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় পুরোদমে লবণ চাষ শুরু হয়েছে। আর চাষ শুরুতে লবণে মূল্য কম থাকায় চাষীরা শংকায় রয়েছেন। গত মৌসুমে লবণের মূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকায় চাষীদের প্রচুর লোকসান হয়েছে। চলতি মৌসুমে চাষীরা লোকসান পোষানোর স্বপ্ন দেখে লবণ চাষ শুরু করেছে। অনেকে মনে করছেন আগের মৌসুমের মত হবে না তো। দিন দিন সব পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়লে ও শুধু লবণের দাম বাড়েনি। আবার লবণের দাম কমার আশংকায় চাষীরা শংকায় রয়েছে। বর্তমান আ’লীগ সরকারের সময়ে লবণের দাম কমলে উপকূলীয় অঞ্চলবাসীর মনে সরকারের প্রতি ক্ষোভ বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আ’লীগ সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে উপকূলবাসী সরকারকে প্রত্যাখান করারও আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় আ’লীগ নেতারা।

অভিযোগ রয়েছে গত ২০১৩ সালে স্থানীয় ও নারায়নগঞ্জের কতিপয় আমাদানি কারক সিন্ডিকেট সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র মূলক ও ভুল পরামর্শ দিয়ে বিনা শুল্কে পুনরায় লবণ আমদানির সরকারী ঘোষণায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা গোটা কক্সবাজারে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। চলতি উৎপাদন মৌসুমে সরকারের লবণ আমদানির এ সিদ্ধান্তটি বাতিল না করলে আত্মঘাতি ও দেশীয় লবণ শিল্পের জন্য মহাবিপর্যয় হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। এমনিতে এ অঞ্চলে সরকারী দল আওয়ামীলীগের আসন কম। এ অবস্থায় লবণ আমদানী ও লবণের দাম কমে গেলে আগামীতে এ অঞ্চলে সরকারী দলের আসন ধরে রাখা যাবেনা বলে রাজনৈতিক ভাষ্যকারগনের অভিমতে প্রকাশ। দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার এলাকায় দীর্ঘকাল থেকে আওয়ামীলীগের প্রতি একটি ভুল ধারণা ছিল যে, তারা ক্ষমতায় আসলে চোরাই পথে ভারত ও বার্মাইয়া লবণের ছড়াছড়ি হবে এবং দেশীয় লবণের দাম পানির মূল্যে পরিণত হতে পারে। বিষয়টি সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় না আনা হলে সম্ভাবনা ময় দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে এবং লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে যাবে। সেই সাথে এ অঞ্চলে আগামীতে আওয়ামীলীগ সরকারের বদনাম ঘুছানো যাবেনা বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। একটি মাত্র অঞ্চলের উৎপাদিত লবণ গোটা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশ রপ্তানির অবস্থা তৈরি হলে ও সম্ভাবনাময় লবণ শিল্পের বিকাশের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার যথেষ্ট অবহেলা রয়েছে বলে স্থানীয় চাষীদের অভিযোগ।

লবণ শিল্পের সার্বিক সহযোগিতার লক্ষ্যে আশির দশকে লবণ বোর্ড গঠনের জন্য তৎকালিন সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বর্তমান সরকার বোর্ড গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করলেও তা বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আজও বাস্তবতার মুখ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কোটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) লবণ শিল্পের আধুনিকায়ন, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরী সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তবু ও এ অঞ্চলের হাজার হাজার লবণ চাষী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখলে ও তাদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে বার বার নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছে। বর্তমান সমিক্ষায় দেখা গেছে এক একর লবণ মাঠের চাষীদেরকে পুঁজি কাটাতে হয় প্রায় এক লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক একর লবণ মাঠে প্রায় ৮/৯শ মেঃটন লবণ উৎপাদিত হতে পারে। বর্তমানে চাষীরা মাঠ পর্যায়ে মণ প্রতি দাম পাচ্ছে মাত্র ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা হারে। বর্তমান বাজার অনুসারে চাষীরা মোটামোটি সারতে পারবে। যদি এর চেয়ে দাম কমে যায় লাভতো দুরের কথা চাষীদেরকে উল্টো প্রতি একরে ৪০/৫০হাজার টাকা করে লোকসানের শিকার হতে হবে।

কক্সসবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সসবাজার সদর টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) এলাকায় প্রায় ৭৭হাজার একর জমিতে সরাসরি এক লাখ প্রান্তিক লবণ চাষী জড়িত রয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে প্রায় ৫/৬মাস এক টানা লবণ উৎপাদিত হয়। গত বেশ কয়েক বছরে বিসিক উদ্ভাবিত পলিথিন পদ্ধতিতে ব্যাপক ভাবে সাদা লবণ উৎপাদন শুরু হয় এবং এতে আশাতীত সফলতা ও আসে। বিগত ১০বছরে চাহিদার অতিরিক্ত লবণ উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে বলে বিসিক সূত্রে জানা গেছে। দেশে লবণ উদ্বৃত্ত থাকায় লবণ আমদানী খাতে সরকারকে একটি ডলার ও খরচ করতে হয়নি।

সরকার ২০০৯ সনের জানুয়ারী থেকে লবণ আমদানির উপর সকল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সুযোগে মজুদদার ও আমদানী কারক সিন্ডিকেট সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লবণ আমদানি করে দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। মধ্যখানে বেশ কিছুদিন লবণ আমদানী বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ভারত ও বার্মাইয়া লবণে বাজার সয়লাভ হওয়ার আংশকায় চাষীরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শংকিত রয়েছে। বর্তমান সরকার চাষীদের কথা চিন্তা করে লবণ আমদানীর ক্ষেত্রে পূনরায় শুল্ক আরোপ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষা করে সরকার এলাকার চাষীদের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে লবণের দালালদের খপ্পরে পড়ে অসংখ্য প্রান্তিক চাষী রাস্তায় নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক লবণ চাষী। খোদ বিসিকের লবণ প্রদর্শনী খামার গুলো বার বার টেন্ডার আহবান করে ও ক্রেতা পাওয়া দূষ্কর বলে বিসিক সূত্রে জানা যায়। দেশের লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এ মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রীর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন লবণ চাষীরা। লবণ শিল্পের সাথে জড়িত দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিশ লাখ জনগণের প্রতি প্রধানমন্ত্রী দয়া করলে লবণ শিল্পের মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। তারা লবণ আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা ও চোরাই পথে লবণের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান। তারই ধারাবাহিকতায় উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের প্রাণের দাবী লবণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গত বছর কুতুবদিয়া মহেশখালীতে পৃথক পৃথক বিভিন্ন সমাবেশের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লবণ আমদানী বন্ধ করার জন্য দাবী জানান।

বর্তমানে চলতি মৌসুমের নতুন লবণ ও বাজারজাত হবে। তৃণমূল লবণ চাষীরা অবিলম্বে বিদেশী লবণ আমদানি বন্ধ করে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ দেশীয় লবণ শিল্পের বিকাশে যুগোপযোগি পরিকল্পনা বাস্তাবায়নের জন্য সরকারী প্রতি জোর দাবী জানান। এদতঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পেশা জীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ লবণ শিল্পের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ব্যাপারে সরকারকে সুনজর রাখার দাবী জানান।

অপরদিকে পুরো জেলা ব্যাপী লবণ উৎপাদন পুরোদমে শুরু হয়েছে। বাজার মূল্য নিয়ে চাষীরা একই ভাবে শংকিত। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায় চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হয়েছে। বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি এ-মুহুর্তে লবণে বাজার মূল্য নিয়ে চাষীরা মহাহতাশার মধ্য দিয়ে লবণ উৎপাদন করে যাচ্ছে। বিসিক পরিচালিত ৪টি লবণ উৎপাদন প্রদর্শণী খামার গুলো হচ্ছে কুতুবদিয়া, মাতারবাড়ী, চৌফলদন্ডি ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী। তম্মধ্যে কুতুবদিয়া লবণ প্রদর্শণী খামারটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়। এ ৪টি খামারে প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ করে আধুনিক প্রযুুক্তি পলথিন পদ্ধতিতে সাদালবণ উৎপাদন করার কথা থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় হতে ফান্ড অনুমোদন না হওয়ায় খামার গুলোতে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি বেশ কয়েক বছর ধরে যার ফলে সরকারকে লোকসান গুণতে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ কারনে গত মৌসুম থেকে বিসিক এর চাষযোগ্য জমিগুলো ইজারা দেয় সরকার।

সূত্রে প্রকাশ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) পূর্ণ রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিগত ২০০৫ সন থেকে এ সংস্থার বহু কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়লেও বর্তমান সরকার ২০১০ সালের মার্চ মাস থেকে বেতন ভাতা দিয়ে আসছে বলে জানা যায়। কুতুবদিয়া (বিসিক) এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিদুয়ানুল রশিদ জানান কুতুবদিয়ায় মোট লবণ চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছয় হাজার ছয়শত পঁচানব্বই একর। তার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ১৪ লাখ মেঃ টনের অধিক। গত বছর চাষযোগ্য জমিগুলো সরকারী ভাবে এক সনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের ইজারা দেওয়া হয়। এ বছরও ইজরা দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। বেতন ভাতার ব্যাপারে তিনি জানান বিগত ২০০৫ সন থেকে বেতন ভাতা ছাড়া খুব কষ্টের মাধ্যমে চাকুরী করলেও বর্তমান নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছে। বিসিক’র সহকারী পরিদর্শক জাকের হোসেন জানান বিসিকের লবণ প্রদর্শনী খামার বেশ কয়েক-বছর ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকলেও গত বছর থেকে বিসিক এর ৪টি লবণ প্রদর্শনীর খামারের চাষযোগ্য জমিগুলো ইজারা দেওয়া ফলে সরকারকে লোকসান গুণতে হচ্ছে না। বেশ কয়েক বছর সরকারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় লবণ উৎপাদন মৌসুমের অতিক্রান্ত হলেও বিসিক’র ৪টি লবণ উৎপাদন প্রদর্শনী খামার অবহেলায় পড়ে থাকতো। এতেকরে একদিকে সরকারের আর্থিক ক্ষতি, অপরদিকে খামার সংশ্লিষ্ট শত শত কর্মকর্তা কর্মচারী বেকার হয়ে পড়তো। তবে গত বছর থেকে কুতুবদিয়া বিসিক লবণ প্রর্দশনীর চাষ যোগ্য জমিগুলো সরকারী ভাবে স্থানীয় চাষীদের ইজারা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমেও ইজারা দেওয়ার জন্য চাষীদের নিকট আবেদন করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গঠিত লবণ বোর্ডের কক্সবাজার জেলা সদস্য ও সদ্য নির্বাচিত উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা আওরঙ্গজেব মাতবর জানায়, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার এ অঞ্চলের চাষীদের কথা মাথায় রেখে লবণ আমদানীর উপর শুল্ক আরোপ করেন। দেশীয় লবন শিল্পকে বাচিঁয়ে রাখার জন্য সরকার যুগপোযুগি সিদ্ধান্ত হাতে নিয়েছে। দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার সকল প্রকার লবণ আমাদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। লবণে ন্যায্যমূল্য যাতে চাষীরা পায় সেই জন্য দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার লবণ চাষীদের সাথে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। আশা করি চলতি মৌসুমে চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা কক্সবাজার জেলাকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে তাই প্রধানমন্ত্রি কক্সবাজার জেলার লবণ চাষীদের দিকে থাকিয়ে এবং লবণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লবণের মূল্য বৃদ্ধি করবেন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/