সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / রামু বৌদ্ধ পল্লী ট্র্যাজেডির ১০ বছর আজ  

রামু বৌদ্ধ পল্লী ট্র্যাজেডির ১০ বছর আজ  

কামাল শিশির; রামু :

১০ বছর আগে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উত্তম বড়ুয়া নামে এক যুবক ফেইসবুকে পবিত্র কুরআন অবমাননার ছবি পোস্ট করার গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজার রামু বৌদ্ধ পল্লীতে হামলায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় অগ্নিসংযোগে ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় তারা। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে উখিয়া-টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ঘটনায় পুরো দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যে ফাটল দেখা দেয়।

২৯ সেপ্টম্বর (বৃহস্পতিবার) ভয়াল বৌদ্ধ পল্লী ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্ণ হল। অপ্রীতিকর এ হামলার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রামুর চেরাংঘাটা মৈত্রী বিহার উপাসনালয়ে সকালে বিশেষ স্মরণ সভার আয়োজন হয়েছে। ধর্মীয় অর্চনায় এতে সবার শান্তি কামনা করা হবে।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা জানান, দশ বছরে রামুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরে এলেও এখনো আতংক কাটেনি। এ অবস্থায় সাক্ষিদের নিরাপত্তা দিয়ে দ্রুত সময়ে বিচার নিষ্পত্তি করার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাক্ষির অভাবে বিচার কার্য শেষ করা যাচ্ছেনা।

রামু বৌদ্ধ কল্যান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলক বড়ুয়া আপ্পু বলেন, বৌদ্ধপল্লী ট্যাজেডির হোতাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও সাক্ষীর কারণে গত ১০বছরেও মামলার চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়নি। তবে বিচারকার্য নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও সম্প্রীতিতে আস্থার সংকট অনেকটা কেটেছে। সরকার নিজ উদ্যোগে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করলে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করতে কেউ সাহস পাবেনা।

রামু উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিক বলেন, বৌদ্ধপল্লী ট্র্যাজেডিতে রামুর সহস্রাব্দের গর্ব ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে’ যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল তা কেটেছে। আমাদের প্রত্যাশা প্রকৃত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হলে সম্প্রীতির জায়গাটা আরও সমৃদ্ধ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ- দ্রুত সময়ে দৃষ্টিনন্দন ক্যাং স্থাপন করে ক্ষতস্থান মুছে দেয়ায়।

রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী বলেন, একটি মহল এদেশের মানুষের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা ব্যর্থ হয়েছে বারবার।

শতবছরের ঐতিহ্যবাহী আমার বাড়ির পার্শ্ববর্তী লামার পাড়া ক্যাংও পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো দুর্বৃত্তরা। আমার পরিবার এবং এলাকাবাসী মিলে পাহারায় এই ক্যাং রক্ষা করি। যাতে সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা থাকে। প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি করছি। যাতে এমন কলংকময় ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ শীল প্রিয় মহাথের বলেন, ঘটনার দশ বছরে আমরা বাহ্যিক ক্ষত কাটিয়ে উঠেছি। কিন্তু এখনো বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় এখনো শঙ্কা থেকে যায়। কখন আবার ধর্মান্ধ এবং ধর্ম ব্যবসায়ীদের আক্রমনের শিকার হতে হয়। সরকার সাক্ষিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে অনেক সাক্ষি নিরাপত্তার কারণে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার চাইলে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে অপরাধী শনাক্ত করে বিচার শেষ করা যেত। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ধর্মব্যবসায়ীদের বিষয়ে সকল ধর্মপ্রাণ মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্তদের অসহযোগিতায় সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ সম্ভব না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম পিছাচ্ছে মন্তব্য করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, এ ঘটনায় করা ১৯ মামলায় ১৫ হাজার ১৮২ আসামির কম-বেশি সবাই জামিনে রয়েছেন। ৫২৬ জন গ্রেফতার হওয়ার পর আর বাকিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। সব মামলারই চার্জশিট হলেও ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় বিচার নিষ্পিত্তি নিয়ে অতটা আগ্রহী নন। তারা সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারলে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করতে প্রস্তুত আদালত।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মোট ১৮টি মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। যেসব আসামি পলাতক রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে রামু থানায় আটটি, উখিয়ায় সাতটি, টেকনাফে দুটি ও কক্সবাজার সদর থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়। এসব মামলায় অভিযুক্ত করা হয় ১৫ হাজার ১৮২ জনকে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

রামুতে তরমুজের দাম চডা :হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা

  কামাল শিশির; রামু :কক্সবাজারের রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/