সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দালাল ও কতিপয় জনপ্রতিনিধিরা

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দালাল ও কতিপয় জনপ্রতিনিধিরা

কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের চেহারা বদলে দিলেন এক কর্তা

 

মুকুল কান্তি দাশ; কক্সবাজার থেকে ফিরে……

মঙ্গলবার সকাল ১০টা। গেইটে আনসার বাহিনীর তিন সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। একজন হ্যান্ড মাইকে বার বার বলছেন আপনারা সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করুন। কোন দালাল বা সহযোগী সাথে নিয়ে ঢুকবেন না। অন্য দুই আনসার সদস্য চেক করে এক এক করে ভেতরে ঢুকাচ্ছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনরা অফিসের ভেতরে ঢুকেই সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন ফরম জমা দিচ্ছেন নির্দিষ্ট কাউন্টারে। তাদের হাতে থাকা আবেদন ফরম জমা দিয়ে ছবি তোলার জন্য ঢুকছেন আরেক রুমে। এর ফাঁকে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামলেন সশ্রুধারি এক ভদ্র লোক। তিনি প্রত্যেকটি রুমে গিয়ে সমস্ত ফাইল দেখছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল তিনি আর কেউ নন ওই অফিসের বড় কর্তা সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম।

কোন দালাল বা তদবিরবাজ ছাড়াই চলছে পাসপোর্ট অফিসের দৈনন্দিন কার্যক্রম। এক কথায় যার পাসপোর্ট তাকেই করতে আসতে হচ্ছে পাসপোর্ট অফিসে। এভাবেই চলছিল কক্সবাজারস্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম। কিন্ত পাঠকরা ভাবতে পারেন এটা কিভাবে সম্ভব! পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের অনেকে এই বলছেন এই অফিসের পূর্বেকার চেহারা অনেকাংশে পাল্টে গেছে। এভাবে চললে কমবে ভোগান্তি ও দুর্নীতি। তাদের মতে ‘কর্তা ঠিক থাকলে সব কিছুই যে সম্ভব’।

এসময় কথা হয় পাসপোর্ট করতে আসা মঞ্জুর আলমের সাথে। তিনি বলেন, গত বছর আমার বাবার জন্য পাসপোর্ট করিয়েছিলাম। দালালকে টাকা দিয়েছি সে সবকিছু করে মাসের মধ্যে আমার হাতে পাসপোর্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয় পাসপোর্ট হাতে পেতে। কিন্তু এবার নিজের জন্য পাসপোর্ট করার জন্য ওই দালালকে বললে সে পারবেনা বলে জবাব দেয়। কারণ হিসেবে বলেন আগের সেই নিয়ম এখন নেই। যার পাসপোর্ট তাকে গিয়ে করতে হবে। তাই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে এসেছি।

পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা গেছে, একটি সাধারণ পাসপোর্ট করতে তিন হাজার চারশ পঞ্চাশ টাকা খরচ হয়। আর জরুরীভাবে করতে হলে সাড়ে ছয় হাজার টাকা লাগে। তাও আবার ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার পর ওই জমা স্লিপটা আবেদন ফরমের সাথে যুক্ত করে পাসপোর্ট অফিসে দাখিল করতে হয়। পরবর্তীতে ওই আবেদনটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিস নিয়ে অনিয়মসহ নানা দুর্নীতির অন্ত ছিলনা। এনিয়ে প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন ছিল ক্ষুব্ধ। দালাল ছাড়া মিলতোনা পাসপোর্ট। গুনতে হতো অতিরিক্ত টাকা। যে লোক পাসপোর্ট করতে এসেছে সে বাংলাদেশী নাগরিক নাকি মিয়ানমারের নাগরিক তা কোন বিষয় ছিলনা। কিন্তু কয়েক মাস আগে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালক পদে আবু নাঈম মাসুম যোগদানের পর থেকেই ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে পুরনো চিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করিয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন দালাল ও স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ওই দালালরা পাসপোর্ট করতে যা যা কাগজ লাগে সব কিছু সংগ্রহ করছেন টাকার বিনিময়ে। কিন্তু পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফরম জমা দেয়ার পর ঘটে বিপত্তি। ফাইলটি আটকে যায় সহকারী পরিচালকের অফিসে। অনেক চেষ্টা-তদবির করেও ফাইলটির কোন গতি আনতে পারেনা। এতে ক্ষুব্ধ এখন দালাল চক্র। তাই হয়রানি ও দুর্নীতি মুক্তে একপ্রকার যুদ্ধে নামা কর্মকর্তা নাঈমকে এ অফিস থেকে তাড়াতে উঠে-পড়ে লেগেছে চক্রটি। এমনকি তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সাজানো অভিযোগও দায়ের করেছে ওই চক্র।

স্থানীয় লোকজন জানায়, আবু নাঈম মাসুম পাসপোর্ট অফিসে যোগদানের পর থেকে সব কিছু পাল্টে ফেলেছেন। অফিসের ভিতরে কোন দালাল এবং তদবিরবাজকে ঢুকতে দিচ্ছেননা তিনি। এমনকি পাসপোর্ট অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী আবেদনকারীদের কাছ থেকে কোন টাকা আদায় করলেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অনিয়ম হচ্ছে কিনা দৃষ্টি রাখছেন।

দালালরা অবৈধ সুযোগ না পাওয়ায় পিছু লেগেছে সহকারী পরিচালকের। নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে এই অফিস থেকে বদলি করতে চান। কিন্তু পরিচালক আবু নাঈম মাসুমের একটিই কথা- অন্যত্র বদলি হতে হলেও কোন অনিয়ম করতে দেয়া হবেনা। আমি যতদিন আছি দালাল কেন কোন তদবিরবাজও ঘেঁষতে পারবেনা অফিসে।

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম বলেন, কিছু দিন ধরে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট আবেদন বেড়ে গেছে। একটি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যেসমস্ত কাগজপত্র লাগে তাও তারা সংগ্রহ করছেন। কিন্তু ফাইলটি যখন আমার কাছে আসে আবেদনকারী রোহিঙ্গা বুঝতে পারার পর আটকে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গাদের আবেদনের ফাইল ছেড়ে দেয়ার জন্য আমার কাছে তদবির নিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু আমার একটাই জবাব বাংলাদেশী ছাড়া কোন মিয়ানমার নাগরিককে পাসপোর্ট দেয়া হবেনা।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকটি পাসপোর্টের আবেদনের ফাইল আমি নিজে যাচাই-বাছাই করি। এছাড়াও ওই আবেদনকারিদের নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি। যারা বাংলাদেশী তারা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও আটকে যায় রোহিঙ্গারা।

তিনি অনেকটা ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, দালালরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার নাম করে লাখ লাখ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমি যতদিন এই অফিসে আছি কোন রকমের অনিয়ম করতে দেয়া হবেনা। এমনকি আমার অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীও যদি অনিয়ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যার পাসপোর্ট তাকেই করতে অফিসে আসতে হবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

রামুতে তরমুজের দাম চডা :হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা

  কামাল শিশির; রামু :কক্সবাজারের রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/