হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সম্মেলন কক্ষে ইউএনও মোঃ মাঈন উদ্দিনের সভাপতিত্বে শনিবার সকাল ১০ টায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ড. মোঃ একেএম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাউলাও মার্মা, উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা। এছাড়াও বিজিবি, গোয়েন্দা বিভাগ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, কোনমতেই একজন রোহিঙ্গাকেও সীমান্তের এপাড়ে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। এ বিষয়ে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবারে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে শতাধিক লোক মারা যাওয়ার ফলে সেদেশের সেনাবাহিনী মিয়ানমার বিদ্রোহী দমনের নামে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে তল্লাশী চালিয়ে গণ গ্রেফতার শুরু করেছে।
যার ফলে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বলে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির সেক্রেটারী মোঃ নুর ও বালুখালী বস্তির সেক্রেটারী লালু মাঝি এ খবর নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার সহ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা নাফ নদী ও স্থল পথ ফাড়ী দিয়ে এদেশে চলে এসে বালুখালী বস্তি, কুতুপালং বস্তি, নয়াপাড়া বস্তি, মোচনী বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে বলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা ডা. দিপু জাফর জানিয়েছেন। বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মুসলমানদের উপর সে দেশের সেনাবাহিনীর তান্ডব অব্যাহত রয়েছে বলে সে জানিয়েছে।
অপরদিকে, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৩০ উপজেলাকে ‘বিশেষ উপজেলা’ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে এসব উপজেলায় রোহিঙ্গারা ভোটার হতে পারে এমন আশংকায় বিশেষ উপজেলা ঘোষণা করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। বিশেষ উপজেলাগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে শনিবার সকাল ১১টায় সার্কিট হাউজে বিশেষ সভার আয়োজন করেছে ইসি। সভায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলা প্রশাসকও উপস্থিত থাকবেন। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে প্রধান অতিথি থাকবেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
৩০ বিশেষ উপজেলা হলো চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী। কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলা, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবান জেলার সদর উপজেলা, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যছড়ি। রাঙামাটি জেলার সদর উপজেলা, লংঘদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুড়াইছড়ি ও বরকল।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনির হোসাইন জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে, এ জন্য জেলা ও উপজেলায় উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ কমিটি রয়েছে। রোহিঙ্গা ঠেকাতে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা এবং নগরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছেন। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৬ দিনে নগরী ও জেলা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৫১ জন নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদী পাড়ি দিয়ে উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে সমতল পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগ আছে, তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ভোটার হওয়া ছাড়াও পাসপোর্ট করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। প্রতিবার ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন থেকে কঠোর নির্দেশনা জারী করা হয়। এবারও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
You must be logged in to post a comment.