সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে চীন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে চীন


গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :
টেকনাফের সেই আলোচিত ‘শালবাগান’ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে এলেন চীনের প্রতিনিধি দল। ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি কার্যালয়ে ২০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

এসময় বাংলাদেশ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সহকারী কমিশনারসহ চীনের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা জানান, মিয়ানমারে নাগরিকত্ব, তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া জায়গা-জমি ফেরত ও সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন।

মিয়ানমারে ফিরে যেতে হলে কি কি করতে হবে সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার মত এখনও সঠিক পরিবেশ তৈরী হয়নি। ঐ পাড়ে বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে এখনো লেগে আছে সংঘাত। যে সমস্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে রয়ে গেছে তাদের উপর এখনো চলছে অমানবিক নির্যাতন। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে কিভাবে আমরা মিয়ানমারে ফেরৎ যাব?

কি করলে মিয়ানমারে যাবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বরত রোহিঙ্গা নেতা গুরা মিয়া ও মোঃ জসীম বলেন, আমাদের তিনটি দাবি পূরণ করলে আমরা নিজ জন্মভুমিতে চলে যাব। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া বসতবিটা ফেরৎ ও সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা।

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে মিয়ানমারে পাঠালে যাবেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে। জবাবে রোহিঙ্গারা যাবেন বলে সম্মতি দেন।

এ সময় রোহিঙ্গা নেতা গুরা মিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য দুইটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। একটি হলো, রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলে জনপ্রতি দুইটি মোবাইল সেট দেওয়া হবে। একটি নিজে সেদেশে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন, অন্যটি এখানে পরিবারে কাছে রাখবেন। যদি মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভালো হয়, মোবাইলে জানিয়ে পরিবারকে সেদেশে নিয়ে যাবেন। আরেকটি হলো, একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গিয়ে অবস্থা দেখে ঘুরে চলে আসবেন। যদি সেখানকার অবস্থা ভালো হয় পরিবার নিয়ে তারা নিজদেশে ফেরত যাবেন।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে চীনের রাষ্ট্রদূত টেকনাফের কেরনতলী ট্রানজিট ঘাট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লি জিমিং জানতে চাইলে জবাবে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকার সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি) আব্দুল হান্নান, জাদিমুরা, শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেন ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

এর আগে গত রবিবার চীনের এই প্রতিনিধি দল কক্সবাজার নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু শূন্য রেখার মধ্যে আটকা পড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ঐ সীমান্ত এলাকাটি ঘুরে দেখেন।
জাতিসংঙ্গের প্রতিনিধি দলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারছেনা বাংলাদেশ সরকার। কারন রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরৎ যেতে চাইনা। এতে বার বার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

উল্লেখ্যঃ বিগত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের রাখাইন ও সেনাবাহিনীরা মিলে সাধারন রোহিঙ্গাদের উপর শুরু করে অমানবিক নির্যাতন। এরপর থেকে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য নাফনদী পাড়ি দিয়ে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে দলে দলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

তথ্য সূত্রে দেখা যায়, সরকারী হিসাবে ২০১৭ সালে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় বর্তমানে ১২ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অনেক বেশী।

এ ব্যাপারে উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষের দাবী উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় বর্তমানে পুরাতন ও নতুন রোহিঙ্গার সংখ্যা কত? তা যদি সঠিক ভাবে গণনা করা হয়। তাহলে এই রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/06/Rohingya-Camp-coxs-bazar-8.jpg

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও গোলাগুলিত : নিহত ১

নিজস্ব প্রতিনিধি; উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/