মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা :
সরই-লুলাইং সড়ক। লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দূর্গম লেমুপালং, সরই, ডলুছড়ি এবং গজালিয়া ইউনিয়নের লুলাইং সহ ৪টি মৌজার ১৪/১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের এই রাস্তায়। পাহাড়ি রাস্তা ও বেশ উচুঁ নিচু হওয়ায় এই রোডে রয়েছে প্রচন্ড দুর্ঘটনার আশংকা। তার উপরে সম্পূর্ণ রাস্তাটি ভাঙ্গা ও খানাখন্দে ভরা। এই পথে চলাচলকৃত জীপ, চান্দের গাড়ী গুলো অনেক পুরাতন ও জরাজীর্ণ। দূর্গম এলাকার মানুষ গুলোকে এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে সঙ্গী করে পথ চলতে হয়। বর্ষা এলে পাহাড় ধস ও রাস্তা ভাঙ্গার কারণে প্রায় ৪ মাস গাড়ী চলাচল বন্ধ থাকে। সে সময় পায়ে হেঁটে পথ চলে এই অঞ্চলের মানুষ।
পথচারী কাদর মুরুং বলেন, আমার বাড়ী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড নোয়া পাড়াতে। ৯ কিলোমিটার হেঁটে সরই বাজারে এসেছি। রাস্তা ভাঙ্গা তাই গাড়ী চলে না। মাঝে মাঝে দুই একটি গাড়ী চলে। প্রায় দুর্ঘটনা হয়। তাই গাড়ীতে উঠতে ভয় লাগে। রাস্তা নয়, এই যেন মরণ ফাঁদ।
লুলাইং সড়কের মেরাইত্তা এলাকার পিতর ত্রিপুরা বলেন, এই রাস্তাটি ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। ২ শতাধিক রাবার বাগান, প্রায় ১ হাজার আম, লিচু ও কমলার বাগান রয়েছে এই এলাকায়। তাছাড়া পাহাড়ের কলা, হলুদ, পেপে, তুলা, আদা, ধান, ভুট্টা, শাক সবজি ও বিভিন্ন ফলমূল উৎপাদিত হয় এই এলাকায়। যা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হয়। এই এলাকার কমলা স্বাধের জন্য বিখ্যাত।
লুলাইং বাজারের দোকানদার মেন রাও মুরুং ও লেমুপালং বাজারের দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তাটির কারণে আমরা মালামাল আনতে পারিনা। ভাঙ্গা রোড হওয়ায় পরিবহন খরচ ৩গুণ বেশী দিতে হয়। যোগাযোগ উন্নত না বলে এই এলাকাটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠনের অভয়রাণ্যে পরিণত হয়েছে। সহজে যাতায়াত করতে না পারায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আসার আগে সন্ত্রাসীরা সরে যেতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর লেমুপালং ও লুলাইং মৌজা। মাঝে মধ্যে সড়কটির উন্নয়ন কাজ হয়। কাজের মান এত খারাপ যে, নির্মাণ বা সংস্কারের দুই এক মাসের মধ্যে রোডটি নষ্ট হয়ে যায়। সরকার দলীয় ঠিকাদাররা কাজ করায় কাজের মান ভাল হয়না। এলাকার মানুষ ভয়ে প্রতিবাদ করে না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরই ইউনিয়ন সদর থেকে লুলাইং পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার। প্রথম ৫ কিলোমিটার কার্পেটিং আর বাকী ১১ কিলোমিটার ইটের সলিং ও কাঁচা। রাস্তাটি বেশ উচুঁ নিচু ও আঁকাবাঁকা। তার উপরে সম্পূর্ণ রাস্তাটি ভাঙ্গা। অনেক জায়গায় রাস্তার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করে চলাচল উপযোগী করতে অনুরোধ করেন স্থানীয় জন-সাধারণ।
সরই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন বলেন, এটি ইউনিয়নের মূল সড়ক। ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বসবাস ও যাতায়াত এই রোডে। রোডটি প্রচুর ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় দুর্ঘটনা হয়। রাস্তা ভাল না হওয়ায় এই এলাকাটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী বলেন, এই রোডটি অনেক পুরাতন। সম্পূর্ণ রাস্তাটি খানাখন্দে ভরপুর। সরই লুলাইং সড়কের বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি কে বলা হয়েছে। আশা করি দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।
You must be logged in to post a comment.