সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শান্তিচুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নে পাহাড়ে অ-উপজাতিদের অধিকার খর্ব হবে

শান্তিচুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নে পাহাড়ে অ-উপজাতিদের অধিকার খর্ব হবে

Rafiq - Lama 30-11-2015 (news & 2pic) f1মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা :

বাংলাদেশের এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম। বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ৫০৯৩ বর্গমাইল বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পাহাড় বেষ্টিত দেশের এক দশমাংশ ভূমি। কর্ণফুলি, চেঙ্গী, মাইনী, কাছালং বিধৌত এই পার্বত্যবাসী জনগন কেমন আছে? পাহাড়ে শান্তি, স্থিতি ও নিরাপত্তা আছে কি? এসব প্রশ্নে উত্তর না পেয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশের বিবেকবান জনতা।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বহু আশা-আকাঙ্খার ফসল ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসযুদ্ধ বন্ধ হবে, চাঁদাবাজী, নৈরাজ্য, গোলাবারুদের ধোঁয়া শেষ হবে, এই ছিল পার্বত্যবাসী উপজাতি ও বাঙালিদের একমাত্র আশা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে পাহাড়ে আজো শতভাগ শান্তির সু-বাতাস প্রবাহিত হয়নি, জনগণ শান্তির শ্বেত কপোতটির আজো দেখা পায়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে করুণালংকার ভিক্ষুর সশস্ত্র আন্দোলনের হুমকি, ভারতের মিজোরামে চাকমা যুবকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলা, সন্তু লারমার সহায়তায় নানাভাবে ভিন্ন নাম দিয়ে আরেকটি শান্তি বাহিনী গঠণ কি ইংগিত দিচ্ছে?

পাহাড়ে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে উপজাতীয় জুম্ম লিবারেশন আর্মি (শান্তিবাহিনী) সব অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ আসলেই কি জমা দিয়েছিল? সন্তুু লারমা বাহিনী কি প্রকৃতই বাংলাদেশ সরকারের কাছে সেদিন আত্মসমর্পন করেছিল? পুনরায় সন্তু লারমারা যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তাদের যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র, সাজসরঞ্জাম, গোলাবারুদ ও সমস্ত শান্তিবাহিনীর সদস্যকে সেদিন একসাথে আত্মসমর্পন করানো হয়েছিল।

বিশ্বের কোথাও আত্মসমর্পনকারী রাষ্ট্রদ্রোহী বিদ্রোহী সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পনের পর এতটা স্বাধীনতা, সুযোগ সুবিধা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার করা হয় না। কিন্তু, একই ধাঁচে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩০ হাজার বাঙালী হত্যাকারী, নিরীহ জনগণের উপর ব্রাশফায়ার চালিয়ে হত্যা সংঘটিত, বহু সেনা-পুলিশ আনসার-বিডিআর এর ঘাতক সন্তুু লারমা আত্মসমর্পনের পর কী আচরন করছে সরকার? কথায় কথায় সন্তুু লারমার অনুগতরা পুনরায় অস্ত্র ধরার হুমকি দিচ্ছে।

তারা জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকায় সুন্দরবন হোটেল, ইঞ্জিনিয়ারস ইষ্টিটিউট মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ তিন পার্বত্য জেলায় অবাধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সন্তুু লারমা, নিজেদের বলছে আদিবাসী, জুম্ম জাতি। তাদের মুখপাত্র জুম্ম কন্ঠ, জুম্ম নিউজ বুলেটিন, রাডার, সেটেলাইট দিয়ে দেশে বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। তাদের বাহিনীর নাম জুম্ম লিবারেশন আর্মি বা শান্তিবাহিনী। এমন কি তারা চির পরিচিত আমাদের মাতৃভূমির মানচিত্রের এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের নামকরণ পরিবর্তন করে নাম দিয়েছে ‘জুম্মল্যান্ড’।

ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের মতো তারা পাহাড়ে জাতিসংঘ শান্তি বাহিনী পাঠানোর লবিং করছে। সেই সুযোগে উপজাতিদের দিয়ে পাহাড়ে গনভোট করিয়ে তাদের জুমল্যান্ড আদায় করে নিতে চায়। অথচ একটি আত্মসমর্পনকারী দলের নেতাও সদস্যদেরকে বিশ্বের কোথাও এতটা স্বাধীনতা দেয়া হয় না। সন্তুু বাবু নিজে মন্ত্রীর সমমর্যাদায় পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানের পদটি আকঁড়ে আছেন দীর্ঘ ১২ বছর এর বেশি সময় ধরে। তার জনসংহতি সমিতির নেতারা ও আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদসহ পাহাড়ের প্রতিটি অফিস আদালতে সিংহভাগ সুবিধা ভোগ করছেন।

আত্মসমর্পনকারী ২ হাজার শান্তিবাহিনী সদস্যকে সরকার লোভনীয় পদে চাকুরী দিয়েছেন। যারা আগরতলা/কলকাতায় শরনার্থী ছিল, সরকার তাদেরকেও পর্যাপ্ত রেশন, চাল-ডাল-তেল-টিন দিয়ে এবং চাকুরী দিয়ে পূনর্বাসন করেছেন। তারপরও কেন এত চক্রান্ত? ২০১৪ সালের ৯ আগষ্ট এবং একাধিকবার সন্তুু লারমা বলেছেন- পাহাড়ে ৪২ বছর যাবত সামরিক শাসন চলছে। উপজাতীয়দের কোন মানবাধিকার নাই? তাই যদি হত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসন থেকে সরকারী দল আওয়ামীলীগের হাই-ভোল্টেজ নেতা দীপংকর তালুকদারকে হারিয়ে সন্তু লারমার দলের সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার রাঙামাটির সংসদ সদস্য কি করে হলো?

বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রতিটি ভূমি কমিশন কেই তারা বানচাল করে দিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির মালিক বাংলাদেশ সরকার না সন্তুু লারমা? ভূমি কমিশনের বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়েও তারা বৈঠকে আসেন না। মাঝে মাঝে দেখা যায়- তারা বৈঠককে ওয়াক আউট করে চলে আসেন। সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী তিন পার্বত্য জেলার ভূমি কমিশনকে কার্যকরী করেছিলেন। কিন্তু, সন্তুুলারমাদের সাজেশন মতো না চলাতে তাকেও ভূমি কমিশনের আদালত/শুনানী করতে দেয়নি ঐ চক্র। যদিও প্রায় ৫ হাজার মামলা ঐ কমিশনের কাছে উপজাতি ও বাঙালিরা দরখাস্তের মাধ্যমে জমা দিয়েছিল।

একগুয়েমি, হামবড়া, স্বেচ্ছাচারি মনোভাবের কারণে প্রতিটি পদক্ষেপই উপজাতীয় নেতারা বানচাল করে দিয়েছে। অথচ তারা কোন বিজয়ী দল নয়। একটি পরাজিত এবং আত্মসমর্পনকারী দলের কাছে এ ধরনের আচরন মোটেও সহ্য করা যায় না। অথচ বাংলাদেশের জনগণ এর পরেও তাদের কাছে শান্তির প্রত্যাশা করছেন। পাহাড়ে এখনো প্রতিটি উন্নয়ন কাজে জেএসএস শতকরা ২০ ভাগ এবং ইউপিডিএফ শতকরা ২০ ভাগ করে বলপূর্বক চাঁদা আদায় করে থাকে। নতুবা কোন ঠিকাদার কাজে হাত দিতে পারে না। অথচ, সন্তুু বাবুরা দেশী বিদেশী মিডিয়ার কাছে বলে বেড়ায়- “শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলেই নাকি পাহাড়ের সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত প্রেক্ষাপট বর্তমান সরকারের কাছে অনেকটা পরিস্কার হয়ে গেছে। যদিও বা আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা কালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা একটি ধারনা পোষন করতো। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদিবাসী ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘে, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মনি ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিদেরকে ডেকে সরকারের প্রকৃত অবস্থান প্রকাশ করেছেন। এতে করে পার্বত্যবাসী শান্তিপ্রিয় বাঙালি এবং উপজাতীয় জনগোষ্টি বর্তমান সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আস্থাভাজন।

শান্তিচুক্তি পূর্নবাস্তবায়নের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যদি সবগুলি বেআইনী অস্ত্র-শস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার না করা হয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করা হয় তবে জনসংহতি সমিতির এবং ইউপিডিএফএ বন্দুক যুদ্ধের মাঝখানে পরে বহু পার্বত্যবাসীকে অকালে জীবন হারাতে হবে- তাতে কোন সন্দেহ নেই।

ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল কনসেপ্ট তথা পাহাড়ে ঐক্য, শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ছাড়া সন্তু লারমার হাতে সমগ্র ক্ষমতা ছেড়ে দিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদি জুম্মল্যান্ড বাস্তবায়নের রূপই পাবে বলে আমাদের গভীর উদ্বেগ ও উত্কন্ঠা আছে। বর্তমান সরকার সেই সুযোগ কোন পাহাড়ী দল বা উপদলকে দিবে না বলেই দেশবাসীর একান্ত বিশ্বাস।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/