সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / শিশু-কিশোর ও নারীদের আর্তচিৎকারে উখিয়া টেকনাফের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে

শিশু-কিশোর ও নারীদের আর্তচিৎকারে উখিয়া টেকনাফের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে

অত্যাচার -নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে পরভূমিতে রোহিঙ্গাদের মাথা গোঁজার ঠাই

 

এম আবুহেনা সাগর; পালংখালী থেকে ফিরে…

মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্মম নির্যাতন, নিপীড়ন, গণহত্যা সহ বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। নির্যাতন আর হত্যার ভয়ে নাফ নদী কিংবা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে দলে দলে রোহিঙ্গারা। কিন্তু এপারে এসে দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে নতুন করে বাঁচার একবুক স্বপ্ন দেখে তারা। আবার অনেকে এদেশে পূর্বে থেকে স্হান নেওয়া আত্মীয় স্বজনদের দেখে বিলাপের সুরে অঝর নয়নে কাঁদছে শুধু কাঁদছে। অনেকে সম্প্রতি ওপার থেকে এপারে চলে এসে মর্মাহত দুর্দিনের কাহিনীও বলে বেড়াচ্ছে।

এদিকে উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের অবাদ বিচরণ যেন চোখে পড়ার মত। পরপরই কাষ্টম, বালুখালী, ঠাইংখালী সহ পালংখালী বটতলী এলাকায় ওদের বেশিভাগ অবস্হান বললেই চলে। এমন চিত্র প্রতিনিয়ত চোখের সামনে। যেন তারা গ্রামাঞ্চলে স্হানীয়দের সাথে মিশে গিয়ে এদেশীয় হিসেবে স্হান করে নিতে চায়। আবার কুতুপালং থেকে উখিয়া টেকনাফ সড়কের দু’পাশ্বে হাজার হাজার ওপার থেকে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানেরা খোলা আকাশের  নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে সে সাথে অনেকে সড়কের পাশ্বে বনভুমি দখল করে ছোট্র ছোট্ট টুকরি বাঁশ ও পলিথিনের ঘর করে দিনরাত পার করছে নানা কষ্টের বিনিময়ে। এরা বনভূমিকে সম্প্রতি বিরানভুমিতে পরিণত করে তুলছে। গুটি গুটি বৃষ্টি আর গরমে মায়ের কুলে থাকা ছোট্ট শিশুটি যন্ত্রণায় চটপট করছে, কিশোরেরা সারাদিন উপোস থেকে এান সহায়তার গাড়ী আসলেই ভুদৌড় দিয়ে ছুটে যায় গাড়ীর দিকে খাবার এবং জীবন বাঁচাতে পানির জন্য। একমুঠো খাবার জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে পুরো পরিবারকে। অসহায় নারী পুরুষদের আর্তচিৎকারে উখিয়া টেকনাফের পরিবেশ যেন ভারী হয়ে উঠছে।

পালংখালীর বটতলী আনজুন পাড়ায় নদীর পাশ্বে অবস্হান নেওয়া রোহিঙ্গা তিন সন্তানের জননী ফাতেমা জানান, ওপারে আমাদের সহায় সম্বল যেটুকু ছিল সেটুকু পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমি আর সন্তানরা জীবন বাঁচিয়ে কোন রকম প্রাণে পালিয়ে আসছি। তবে প্রিয়তম স্বামীর খোঁজ পায়নি তিনদিনেও বলে চোখের কোনায় কষ্টের জল এসে দাঁড়ায়। বর্তমানে এানের খাবার আর কাপড় ছাড়া চলার মত সম্বল আর কিছুই নেই।

এদিকে রহিমা এবং ছকিনা জানান, কোন রকম প্রাণে বেঁচে আছি। শিশু পুত্র নিয়ে অতি কষ্টে রয়েছেন তারা। এক বেলা পেলে দুবেলা পায়না খাবার। শতোর্ধ্ব আজিম জানান, ওপারে আমার জায়গা জমি আছে, বাড়ীঘর রয়েছে এবং ছেলেদের দোকান-পাঠ রয়েছে। সবকিছু শেষ করে দিলো হায়েনাদারেরা। এগুলো কি ফিরিয়ে পাব বলে বিলাপ করতে করতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়। বয়োবৃদ্ধা ও অন্ধ আছিয়া জানান, আমার কোন ছেলে মেয়ে কিংবা আত্মীয়-স্বজন নেই। একটি ছোট বোন ছিল সেটিও আমাকে ফেলে পালিয়ে এসেছে। আমি আমার এলাকার কয়েকজনের সহযোগীতা চাইলে তারা আমাকে এদেশে পার করিয়ে কাধে করে। বর্তমানে তিনি অত্যাচার, নির্যাতন  থেকে মুক্ত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন।

কুতুপালং এলাকায় অবস্হান নেয়া ৭০ বছর বয়সী আলী হোসন জানান, সবকিছু শেষ করার পরও প্রিয় মাতৃভুমির মাটিতেও ঠাই হলনা। পরভুমি বাংলাদেশে আশ্রয় হিসেবে কোন রকম মাথা গোঁজার স্হান হল।

অপরদিকে কুতুপালং, বালুখালী, কাষ্টম সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এক শ্রেণীর কতিপয় যুবকরা কাঁচা বাঁশ এবং কালো পলিথিন চড়াদামে বিকিকিনির মাধ্যমে তাদের ব্যবসা জমিয়ে তুলছে। এক বাঁশ ব্যবসায়ীর সাথে দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি একটি বাঁশ ১০০/১২০ টাকায় বেচাকেনা করছেন বলে জানান। তবে পলিথিন যার কাছ থেকে যা পাচ্ছেন তাই নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে মিয়ানমারের পাশ্ববর্তী মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন পয়েন্ট অবস্হান করা রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে সংগঠন বা ব্যক্তিগত তরফ থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে চোখে পড়ে।

ছাগলনাইয়া ফেনী থেকে আসা এক যুবকের মতে, নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের প্যাকেট, পানি সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন বলে জানান। তবে এলাকার সচেতন মহলের মতে, রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে যাওয়ার পর এবার জেলার নানা পাড়া মহল্লামুখী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদেরকে এখন থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। অন্যথায় পরর্বতীতে বিভিন্ন এলাকায় বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটার আশংকা ও প্রকাশ করেন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর কালিরছড়ায় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে প্রার্থী হলেন নুরুল আমিন

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অসহায় ও হত দরিদ্র মানুষের মুখে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/