সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সবজি ও ফসলি জমি এবং মৎস্য ঘের তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি!

সবজি ও ফসলি জমি এবং মৎস্য ঘের তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি!

কুতুবদিয়ায় টানা ৭২ ঘন্টা বর্ষণে ও অমাবষ্যার জোয়ারে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত

এম.রাসেল খাঁন জয়; কুতুবদিয়া :

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় গত ৩ দিনে একটানা ৭২ ঘন্টা ভারী বৃষ্টির ফলে এবং অমাবষ্যার জোয়ারে সমুদ্রের লোনা পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাউবোর ৭১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও বেড়িবাঁধ টপকিয়ে উপজেলার উত্তর ধূরুং, আলী আকবর ডেইল, কৈয়ারবিল এবং লেমশীখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসময় এসব এলাকার শত শত কাঁচা ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। ছোট-বড় প্রায় ৫শত মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং আমন চাষের শত শত হেক্টর ফসলী জমি তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এমনিতে টানা ৭২ ঘন্টা ভারী বর্ষণে স্বাভাবিক জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। সেই সাথে অমাবষ্যার জোয়ারে সাগরের লোণা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার মানুষের নেমে এসেছে সীমাহীন দূর্ভোগ। ৩দিনের টানা বৃষ্টিতে বেকায়দায় পড়ে কর্মজীবি ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। টানা বৃষ্টির কারণে কর্মজীবি ও বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। ফলে কর্মজীবি ও পেশাজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এতে উপজেলার প্রায় শতশত পরিবার পানিবন্দী হওয়ার পাশাপাশি তরীতরকারী ও উৎপাদিত সবজি, ফসলি জমি, মৎস্য ঘের তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ২২ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত একটানা ৭২ ঘন্টা অতি বৃষ্টির ফলে উপজেলার প্রায় শতশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং প্রায় শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে গেছে । এসব ঘর-বাড়ির লোকজন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার জন-প্রতিনিধিরা।

এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন চাষের শতাধিক বীজ তলা এবং হাজার হাজার একর বোরে চাষের রোপিত চারা তলিয়ে গেছে। ছোট-বড় ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের ও পুকুর তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার উত্তর ধূরুং, দক্ষিণ ধূরুং, লেমশীখালী, কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ, আলী আকবর ডেইলসহ মোট ৬টি ইউনিয়নে প্রায় শতশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় হাজার হাজার একর আমন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং ছোট বড় প্রায় ৫ শতাধিক মৎস্য চাষের পুকুর তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।

আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কৃষক আবদুল মোনাফ জানায়, চলতি মৌসুম শুরুর প্রথমে অনাবৃষ্টির ফলে কৃষকদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। গেল মৌসুমের চেয়ে প্রায় ১ মাস পরে বীজ তলা তৈরী করে বীজ থেকে জালা তৈরী করা হয়। জালা জমিতে রোপনের  ২০ দিনের মাথায় একটানা অতি বৃষ্টির কারণে বীজ তলা তলিয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে পূনরায় বীজ তলা তৈরী করে জমিতে আমন চাষের চারা রোপন করার ১০ দিনের মাথায় ৪ দিনের একটানা বৃষ্টিতে ফসলি জমি গুলো পানির নিচে ডুবে থাকলে আমন চাষের রোপিত চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি আমন চাষের রোপিত চারা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে নতুন করে চারা রোপন করতে বিলম্ব হয়ে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হবে।

কৈয়ারবিল ইউনিয়নের অনেক জায়গায় আমন চাষের রোপতি চারা তলিয়ে গেছে। আবার নতুন করে আমন চাষের জন্য বীজতলা তৈরী করতে হবে বলে জানায় কৈয়ারবিল ইউনিয়নের কৃষক মনজুর আলম। এতে করে ওইসব এলাকার কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কৃষক আমান উল্লাহ জানায়, গত ২মাস আগে বেগুন ও টমেটো সবজির চারা রোপন করা হয় ৪শতক জমিতে। বর্তমানে প্রতিটি চারায় বেগুন ও টমেটো ধরা দিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সবজিগুলো তোলার পরিকল্পনা ছিল। গত ৩ দিনের টানা বর্ষণে সবগুলো চারা মাটিতে পড়ে যায়। চারাগুলো আর ভাল হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এতে করে তার প্রায় ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানায়।

রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন জানায়, ৩ দিনের টানা বর্ষণে রিকশা শ্রমিকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারেনি। ৩দিন ধরে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তায় বের হলেও লোকজন কম থাকায় তেমন ভাড়া মেলেনি। এতে করে শ্রমিকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বড়ঘোপ মগডেইল এলাকার মৎস্য ঘের মালিক নজরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুম শুরুতে প্রায় ২ লক্ষ টাকা পুঁজি খাটিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করেন। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই একটানা বৃষ্টির ফলে মৎস্য ঘের তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এ ব্যাপারে লেমশীখালী ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোছাইন জানায়, তার এলাকায় একটানা ৭২ ঘন্টা বৃষ্টির ফলে প্রায় এক শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং প্রায় ১ শত পরিবার বর্তমানে পানিবন্দী রয়েছে।

আলী আকবর ডেইল ইউপি চেয়ারম্যান নূরুচ ছাফা বি কম জানান, অমাবষ্যার জোয়ারে ও একটানা অতিবৃষ্টির ফলে প্রায় দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি, শত শত একর ফসলি জমি ও মৎস্য চাষের অসংখ্য পুকুর তলিয়ে গেছে।

কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহম্মদ বিএ (অনার্স) জানায়, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে টানা ৩দিনের বর্ষেণে আমন চাষের ব্যাপক জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও অগ্রিম উৎপাদিত সবজি (মুলা, বেগুন, টমেটো) টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাছ চাষের পুকুর তলিয়ে গেছে।

দক্ষিন ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহম্মদ চৌধুরী জানায় দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের মদিনা পাড়া, ধূরুং কাচা, বাতিঘর পাড়া এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবার ও শতশত মৎস্য ঘের এবং ফসলি জমি তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানায়।

এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও বড়ঘোপ বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব আওরঙ্গজেব মাতবর জানায়, যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে সে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা না থাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এবারে টানা ৭২ ঘন্টা ভারী বর্ষণে কুতুবদিয়া উপজেলার ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শতশত বসত বাড়ি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারসহ এলাকার বিত্তবান দাতা সংস্থার প্রতি আহবান জানান।

এই ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫ শতাধিকেরও অধিক পরিবার অতিবৃষ্টির ফলে প্লাবিত হয়েছে এবং ৫শত পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার হাজার হাজার একর আমন চাষের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং প্রায় ১ হাজারের অধিক মৎস্য চাষের পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে চাষিদের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/