সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / পুষ্টি ও স্বাস্থ্য / স্তন ক্যান্সার নিয়ে কিছু কথা

স্তন ক্যান্সার নিয়ে কিছু কথা

অনলাইন ডেস্ক :
বর্তমানে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মহিলাদের কাছে স্তন ক্যান্সার একটি মারাত্মক আতঙ্কের নাম। স্তন্য ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসা পরিভাষায় স্তন ক্যান্সার বলতে স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে ঐ অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পান্ডা পরিণত হয়। কালক্রমে এই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হলে রক্তনালির লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। পুরুষদের মধ্যেও স্তন্য ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। যদিও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। স্তন ক্যান্সারে যতোজন আক্রান্ত হন তাদের ৮০ ভাগেরই বয়স হচ্ছে ৫০-এর ওপর। সেই সাথে যাদের পরিবারে কারোর স্তন ক্যান্সার রয়েছে তাদেরও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। বাংলাদেশেও বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ।

স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রোগীরা অনেকসময় সচেতনতার অভাবে লজ্জা অনুভব করে চিকিৎসকের কাছে আসছেন না। নারীরা ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে হবে। যেকোনো নারীই তার গোসলের সময় বা ওয়াশরুমে গেলে এটা নিজে নিজেই পরীক্ষা করতে পারেন। যেভাবে করবেন আয়নার সামনে কাধ সোজা করে দাঁড়ান, কোমরে হাত রাখুন ও আপনার স্তনের আকার, আকৃতি ও রং লক্ষ্য করুন স্তনের কোথাও ক্ষত অথবা লাল স্থান অথবা ফোলা লাগছে কিনা এটাও দেখুন আপনার ডান হাত দিয়ে বাম স্তনে চাপ দিন। এক্ষেত্রে আপনার হাতের আঙুলগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করুন (হাতের তালু নয়)। ধীরে ধীরে চাকতির মতো করে হাত ঘুরান ও অনুভব করুন। একই ভাবে বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন। পরীক্ষাটা করার সময় হাতের তালু বাকা না করে সোজাভাবে রাখতে হবে। স্তনে চাপ দিয়ে দেখতে হবে অস্বাভাবিক কিছু বোঝা যায় কিনা। এটা যেকোনো সময় করা যায়। তবে মাসিকের ৭ দিন আগে বা ৭ দিন পরে এই পরীক্ষাটা করলে, স্তনে কোনো চাকা থাকলে সেটা তখন গুরুত্বসহকারে বুঝা যায়। তাছাড়া ও পরিস্কার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পর্যাপ্ত আলোয় নিম্নের প্রতিটি অবস্থায় নিজেকে লক্ষ করুন: দুই বাহু শরীরের দুই পাশে ঝুলিয়ে রাখুন তারপর বাহুদ্বয় মাথার ওপরে বা পেছনে উঁচিয়ে ধরুন। তারপর দুই হাত কোমরে চাপ দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যাতে বুকের মাংসপেশি টান টান হতে পারে। সবশেষে স্তনবৃন্তে হালকা করে একটু চাপ দিয়ে দেখতে হবে, কোনো রস বের হয় কি না।

আর যাদের পারিবারিক ইতিহাস নেই, তাদের স্তনে চাকা হলে নিপল দিয়ে রসজাতীয় পদার্থ বের হয় বা নিপলের ভিতরে ঢুকে গেলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে স্তনে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। যে কারণে চাকা থাকলেও বুঝা যায় না। তাই যারা কনসিভ করছেন বা করবেন তারা অবশ্যই স্তনে কমপক্ষে একটা আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে নিবেন, যাতে স্তন ক্যান্সার থাকলে সেটা বুঝা যায়। স্তন ক্যান্সারের যে চাকাটা সেটা কিন্তু ব্যাথা সৃষ্টি করে না। তাই এটা গুপ্তঘাতকের মতো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। যখন অনেক বড় হয়ে যায়, স্কিন ধরে ফেলে, নিপল দিয়ে রস বের হয়। তখন সেটা ব্যাথার সৃষ্টি করে। তারমানে সেটা তখন ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সেজন্য বাচ্চা হওয়ার আগে ও পরে একটা অন্তত আল্ট্রাসনোগ্রাম করা উচিত।

লক্ষণ বা উপসর্গ :

  • স্তনে বা তার আশেপাশে নতুন কোনো পিণ্ড/ চাকা চাকা/দলার মতো গঠন তৈরি হওয়া
  • স্তনবৃন্তের আশেপাশে বা বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া
  • স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন
  • বোঁটার চারপাশে কালো অংশে চুলকানীর লক্ষণ নিয়ে আসা ইত্যাদি
  • স্তনবৃন্ত থেকে দুধ ছাড়া রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া
  • স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া
  • স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া
  • স্তনের বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া
  • স্তনের চামড়াটা দেখতে কমলার খোসার মতো ফুটো ফুটো হয়ে যাওয়া বা রং পরিবর্তন হওয়া

স্তন ক্যান্সারের ঝুকিতে কারা বেশি :

  • বয়স যত বাড়তে থাকে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বাড়ে। বেশিরভাগ ক্যান্সার ধরা পড়ে ৫০ বছর বয়সের পরে।
  • দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল/বড়ি খাওয়া বা হরমোনের ইনজেকশন নেয়া।
  • তেজস্ক্রিয়তা: শিশু অথবা তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক তেজস্ক্রিয়/বিকিরণ রশ্মি দিয়ে চিকিৎসা করলে পরবর্তী জীবনে তার স্তন ক্যান্সারের বিকাশের সম্ভাবনা থাকে।
  • পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে। যদি কারও মা, বোন অথবা মেয়ের স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে তার স্তনে ক্যান্সারের আশঙ্কা অনেক গুণ বেশি। তবে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছে, এমন ব্যক্তিদের অধিকাংশরই কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই।
  • জিনগত কারণ: এখানে দুটি জিনের কথা বলা হয়ে থাকে। বিআরসিএ ওয়ান ও টু। এই জিন দুটির অস্বাভাবিক বিভাজনের ফলে শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ স্তন ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • তাড়াতাড়ি ঋতুস্রাব/দেরিতে মেনোপজ: ১২ বছর বয়স হওয়ার আগে ঋতুস্রাব হলে বা ৫৫ বছর বয়সের পর যদি মেনোপজ হয়, তা স্তন ক্যান্সারের বিকাশ ঘটাতে পারে।
  • হরমোন: ঋতুজরার লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহের জন্য যেসব মহিলা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনে মিলিত হরমোনের চিকিৎসা নেন, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • দেরিতে গর্ভধারণ: ৩৫ বছরের পরে যদি কোনো মহিলা প্রথম সন্তান জন্ম দেয় বা দুধপান না করালে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • অ্যালকোহল/মদ্যপান: অতিরিক্ত অ্যালকোহল/মদ্যপানে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষত, স্থূলতার সাথে স্তন ক্যান্সারের একটি যোগসূত্র রয়েছে।
  • হেলদি ফুড: হেলদি খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। সবজি জাতীয় খাবার যেমন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ফলমূল ইত্যাদি খাবার বেশি খেতে হবে। এ ধরনের সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো যায়।

বর্তমান সময়ের চিকিৎসা যতোটাই আধুনিক ও উন্নত হোক না কেন, ক্যান্সার যতো দ্রুত সনাক্ত করা যাবে এর চিকিৎসা ততোটাই সহজ হয়ে যাবে। আমাদের সকলের মনে রাখা দরকার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

রামুতে তরমুজের দাম চডা :হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা

  কামাল শিশির; রামু :কক্সবাজারের রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/