সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / পেকুয়ায় সাদা পোষাকের পুলিশি গোয়েন্দা নজরদারী জোরদার : ধরপাকড় আতংক

পেকুয়ায় সাদা পোষাকের পুলিশি গোয়েন্দা নজরদারী জোরদার : ধরপাকড় আতংক

Shagir  17-10-2015(news & 1pic)ছগির আহমদ আজগরী; পেকুয়া:

কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাদা পোষাকের পুলিশি গোয়েন্দা টহল ও নজরদারী জোরদার করা হয়েছে। এনিয়ে এলাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডে ছড়িয়ে পড়েছে ধরপাকড় আতংক। ফলে বেশ কিছু চিহ্নিত অপরাধী পুলিশি ধরপাকড় এড়াতে পাড়ি ও এলাকার বাইরে আত্মগোপন শুরু করেছেন। গোয়েন্দা নজরদারীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার অফিসার ইনচার্জ

(প্রশাসন)।

জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জেলার পেকুয়ায় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় অপরাধ মূলক কার্যক্রম। এই সময়ে ৭ ইউনিয়নের পেকুয়া মডেল উপজেলার কোন না কোন ইউনিয়ন বা প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লাগুলোয় একের পর এক লাগে সংঘর্ষ রক্তপাত হানাহানী হতাহতের ঘটনা। পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয় ও হতাশাজনিত কারণে দেখা দেয় আত্মহত্যা, অপমৃত্যু ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা। পাল্লা দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা দেয় মাদকাসক্তি, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন প্রকার অপরাধ প্রবনতা। যার মধ্যে শিলখালীর জারুলবুনিয়ার হাফ ডজন মামলায় সংশ্লিষ্ট নুর মোহাম্মদ ও যুবলীগ সমর্থক রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে ফ্রি চিকিত্সা ক্যাম্পে হামলা, তান্ডব, ভাংচুর ও লুটপাট ছাড়াও কমরউদ্দিন নামে এক অধ্যক্ষকে কুপিয়ে গুরুতর জখম, সদরের ছিরাদিয়া এলাকায় মামা-ভাগ্নে গ্রুপের গুলিবিনিময়ে হতাহত, শিলখালীর লম্বামুরায় ওমান প্রবাসীর বসতঘরে অস্ত্রধারী দূর্বৃত্তদলের হানায় কুপিয়ে জখম-লুটপাট ও সর্বশেষ ৬ অক্টোবর পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম সাহাবউদ্দিন ফরায়েজী নিখোঁজ ও পরদিন তার নিজ গ্রাম টইটংয়ের দূর্গম পাহাড়ি বটতলী জুমপাড়ায় বাশখালী সীমান্ত সংলগ্ন মালঘাড়া ছড়ায় তার লাশ উদ্ধার সহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর অপরাধ।

উল্লেখ যোগ্য এসব অপরাধ মূলক ঘঠনার জের ধরে এলাকার মানূষের মাঝে চরম নিরাপত্তাহীনতার আতংক ছড়ানোর পাশাপাশি দেখা দেয় তোলপাড় এবং কানাঘোষা। বর্তমান সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগী হিসাবে পরিচিত খোধ স্থানীয় সরকারদল আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোয়ও দেখা দেয় উদ্বেগ আতংক। প্রতিক্রিয়ায় আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে দেখায় ক্ষোভ বিক্ষোভ। ঘটা করে তারা দাবী তুলেন থানা পুলিশে বদলীর। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে স্থানীয় প্রশাসন এর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নেতৃস্থানীয়দের। ফলে ঘুমহারা হয়ে পড়ে থানা পুলিশ প্রশাসন।

মাঠে নেমে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে জেলা পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থ্যার লোকজন। এমনকি সঠিক তথ্য ও প্রকৃত অবস্থা জানতে দফায় দফায় জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সরোজমিন পরিদর্শন ও খোঁজ খবর সংগ্রহে অতিবাহিত করেন ব্যস্ত সময়। খোদ কক্সবাজার জেলা পুলিশের দূরদর্শী চৌকষ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) এম.মাসুদ আলম নিজে সার্বক্ষনিক পেকুয়ায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মনিটরিং চালান। যা নিয়ে হতাশা দেখা দেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঝে। কিন্তু সরকারের উচ্চ মহল ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটা করে পেকুয়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশ বা প্রশাসনের চেয়ে খোদ সরকারদলীয় নেতৃস্থানীয়দের ব্যর্থতা ও অসহযোগিতাকেই দায়ী বলে জনমত পেয়ে তা দ্রুত সরকারের উচ্চ পর্যায় ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলকে অবহিত করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে দেয়া শুরু করেন বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ। এতে ফলে, হাফ ছেড়ে পেকুয়া থানা পুলিশ। আশাবাদী হয়ে উঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে দেখা যায় যে, সকল সরলতা, ব্যর্থতার গ্লানি ঝেড়ে নতুন করে সক্রিয় হতে শুরু করেছে পেকুয়ার থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।

পেকুয়া থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ (প্রশাসন) মোঃ আবদুর রকিব ও ওসি (তদন্ত) মোঃ শহিদ উল্লাহ ছাড়াও বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পেকুয়ার আইন-শৃঙ্থলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি রোধ সরকারী বেসরকারী সম্পদ ও জনমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সকল পর্যায় থেকে দেয়া হয়েছে নানা কঠিন নির্দ্দেশনা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা। এ নির্দেশনায় দলমতের উর্ধ্বে উঠে আইনের শক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে হলেও পেকুয়ার আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন করতে বলা হযেছে। সেই নির্দ্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পেকুয়ায় থানায় প্রেরন করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ফোর্স। খোদ কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের দূরদর্শী চৌকষ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) এম.মাসুদ আলম এর সার্বক্ষণিক নির্দ্দেশনায় পেকুয়া থানার ওসি মোঃ আবদুর রকিব ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের সাদা পোষাকে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত করে রাতদিন এলাকার প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লায় টহল ও নজরদারীতে নামিয়েছেন।

শনিবার থেকে সাদা পোষাকধারী প্রায় ৭-৮টি টিম পেকুয়ার পাড়া-মহল্লায় বিদ্যমান অপরাধ ও অপরাধীদের উপর দিয়েছেন কঠোর নজরদারী। প্রাথমিক পর্যায়ে এরা শুধু অপরাধ ও অপরাধীদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি এতে জড়িতদের ধরপাকড়ের পরিকল্পনা ছক আঁকারে কাজ করছেন। এরই ধরাবাহিকতায় শুরুও হয়ে গেছে ধরপাকড় অভিযান। যার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতের অভিযানে টইটংয়ের দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় ডাকাতি প্রস্তুতি বৈঠকে হানা দিয়ে বুরহান নামের ১ডাকাতদলের সদস্যকে আটক ও তার স্বীকারোক্তিতে বাঁশখালীতে অভিযান চালিয়ে ১টি দেশীয় তৈরী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার। একই রাতে পৃথক আরেক অভিযানে বারবাকিয়া-শিলখালীর আতংক হিসাবে পরিচিত ডাকাত বদাইয়ে বাহিনীর সোর্স হিসাবে পরিচিত আলমগীর নামে এক বখাটে যুবককে আটক করে পুলিশ।

এছাড়া অতিরিক্ত সাদা পুলিশের একাধিক টিমকে উপজেলার অপরাধ প্রবন এলাকায় টহল ও নজরদারীতে ব্যস্ত সময় কাঠাতে দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার লোকজনও সাদা পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারী ও টহলাভিযানের বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, মনে হয় পেকুয়া থানার ওসি রকিব আর তদন্ত (ওসি) শহিদউল্লাহর নেতৃত্বে অন্যান্যরা লড়েছড়ে বসেছেন। যার কারণে ধরপাকড় আতংকে অপরাধ ও অপরাধে জড়িত আন্ডার ওয়ার্ল্ডে দেখা দিয়েছে আত্মগোপনে পাড়ি জমানোর প্রবনতা।

পেকুয়া থানার ওসি মোঃ আবদুর রকিব ও তদন্ত (ওসি) শহিদ উল্লাহ এ প্রতিবেদকের কাছে গোয়েন্দা নজরদারী ও টহলাভিযানের সত্যতা স্বীকার বলেন, অপরাধ ও অপরাধীদের আর কোন ছাড় পাড় নাই। পেকুয়া থানা পুলিশ কোন অপরাধ ও অপরাধীদের সাথে আপোষ করবেনা। অপরাধ ও অপরাধীদের অবস্থানের বিষয়ে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছ থেকে তথ্য ও সহযোগিতা কামনা করে তারা আরো বলেন, পেকুয়ার মাটি ও মানুষের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত রাতদিন পোষাকধারী ও সাদা পোষাকধারী পুলিশের নজরদারী ও টহলাভিযান অব্যাহত থাকবে। কোন অপরাধীই যাতে আর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থান বা পার না পায় সে বিষয়ে সতর্ক থেকে ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত রাখবে পুলিশ।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/