কক্সবাজারে জমি জটিলতায় ঝুলে রয়েছে ডাম্পিং স্টেশন (বর্জ্য ফেলার স্থান) নির্মাণ। গত তিন বছর ধরে বেশ কয়েকটি জমি নির্ধারণ করা হলেও নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। আর সময় মতো জমি ঠিক করতে না পারায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রায় চার কোটি টাকার প্রকল্পও ফেরত গেছে।
এই সুযোগে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌরসভা প্রতিদিন টন টন বর্জ্য ফেলে দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। অভিযোগ রয়েছে পৌর কাউন্সিলার সহ প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে ছোট বড় স্থাপনা নির্মাণ করছে। এর ফলে উচ্চ আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এদিকে কক্সবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, আড়াই বছর আগে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশ দায়িত্বে থাকাকালীন শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকায় ডাম্পিং স্টেশনের জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর রামু উপজেলার চেইন্দা মৌজায় আবারও জমি নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে সেই জমিতে সরকার ঘোষিত ‘রেললাইনের এলাইটমেন্ট’ পড়ায় তাও বাতিল হয়। এখন রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ডাম্পিং স্টেশনের জমি ঠিক করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই জমিটি ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে।
তবে এর আগে কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোডের উত্তর পাশে বাঁকখালী নদীর তীরে প্রায় দুই একর জমিতে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনে ভরাটের কাজ শুরু করেছিল পৌরসভা।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ওই কাজ শুরু করা হলেও মাঝপথে তা স্থবির হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে কাজ বন্ধ হয়ে দুই একর জমির মধ্যে প্রায় এক একর জমি বেদখল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল জানান, জমি জটিলতার কারণে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করা যাচ্ছে না। তবে এখন রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ডাম্পিং স্টেশনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই জমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও যাচাই বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত করেছেন।
এছাড়া কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে জমিটি অধিগ্রহণও করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে শহরের চেইন্দা এলাকায় নেয়া জমিটি ক্রয়ে ব্যাপক কারচুপির হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি চূড়ান্ত হলে প্রকল্প তহবিল হতে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এতে পর্যটন শহরের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকবে না। আর ডাম্পিং স্টেশনের ময়লা সার-গ্যাসসহ বিভিন্ন সম্পদে রূপান্তরিত হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য চার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। জমি নির্ধারণ করে ভরাট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কক্সবাজার পৌরসভাকে। দুই বছর পার হলেও জমি নির্ধারণ করতে পারেনি পৌরসভা।’
তিনি জানান, তিন বছর আগে পৌর কাউন্সিলর রাজ বিহারী দাশকে পৌর মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে ডাম্পিং স্টেশনের জমি ঠিক করতে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জমি জটিলতা থাকায় ওই প্রকল্পের চার কোটি টাকা ফেরত চলে গেছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব চঞ্চল দাশগুপ্ত বলেন, প্রতিদিন বর্জ্য ফেলে কক্সবাজার পৌরসভা বাঁকখালী নদীর তীর দখলে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিদস্যুদের উৎসাহ দিয়ে আসছে। তাছাড়া পৌরসভা সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হিনতা এবং জমি অধিগ্রহনের টাকা লুটপাটে অসুবিধার কারনেই ডাম্পিং স্টেশনের জন্য বরাদ্দের টাকা ফেরত গেছে।
You must be logged in to post a comment.