কমে যাচ্ছে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি
গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ :
পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারী বাহিনী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ করে দেওয়া হয় টেকনাফ টু মিয়ানমার মংডু শহর বর্ডার পাস ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। তার পাশাপাশি টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রমও শীতিল হয়ে পড়ে। কমে যায় আমদানি ও রপ্তানি। মিয়ানমারের সহিংস ঘটনায় টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। কারন এই সমস্ত ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কাছে আটকা পড়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্রে আরো জানা যায়, ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষি বিজিপি ক্যাম্পে হামলা, অস্ত্রলুট’কে কেন্দ্র করে বিজিপি ও স্থানীয় রোহিঙ্গাদের সাথে লাগাতার সংঘর্ষ কেন্দ্র করে প্রায় দেড় মাস ধরে মিয়ানমারের মংন্ডু শহর থেকে কোন প্রকার মালামাল আসতে পারেনি। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানিতে নেমে আসে স্থবিরতা। তবে মাঝে মাঝে মিয়ানমারের আকিয়াব শহর থেকে দুই একটি কাঠ বোঝাই ট্রলার স্থলবন্দরে আসতে দেখা যায়। গত দেড় মাসে মিয়ানমার থেকে ব্যবসায়ীরা মালামাল আমদানি করতে না পারায় দিন দিন কমে যাচ্ছে সরকারী রাজস্বের আয়।
অপরদিকে টেকনাফ টু মংন্ডু বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াত ৪৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন এই ট্রানজিট ঘাট থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর গভীর রাত থেকে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিজিপি ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে হামলা, ভাংচুর, গোলাগুলির সূত্রপাত সৃষ্টি হয়। সেই সুত্র ধরে গত ৪৫ দিন ধরে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রাদায়ীক রোহিঙ্গা মুসলীমদের উপর শুরু হয় নির্বিচারে নির্যাতন, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি ঘর, এরপর শুরু হয় নির্বিচারে মানুষ হত্যা, এ গণহত্যা থেকে রেহাই পাচ্ছে নারী ও শিশুরা। সেই সূত্র ধরে টেকনাফ টু মংন্ডু ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তার পাশাপাশি টেকনাফ স্থলবন্দরে কমে যায় আমদানি ও রপ্তানি। বিপাকে পড়ে যায় ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ স্থল বন্দরের দায়িত্বে থাকা অভিবাসন-ট্রানজিট কর্মকর্তা মো. হোসেন জানান, মিয়ানমারে সহিংস ঘটনার সূত্রপাতে প্রায় দুই মাস ধরে টেকনাফ টু মংন্ডু বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের অভিবাসন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ চলছে। সেই দেশের সহিংস ঘটনা ও সংঘাত কমে আসলে পুনরায় বর্ডার পাস ট্রানজিট যাতায়াত চালু করা হবে।
অন্যদিকে টেকনাফ স্থল বন্দর ইনচার্জ আবু নুর খালেদ জানান, মিয়ানমারের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গত দুই মাস ধরে মিয়ানমারে মংন্ডু শহর থেকে কোন পণ্যবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে আসেনি। এবং টেকনাফ থেকে কোন পন্যবাহী ট্রলার মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে যেতে পারেনি এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি। এই ভাবে চলতে থাকলে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে সরকারী রাজস্বের আয় কমে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
৪ ডিসেম্বর মাসিক রাজস্ব আয়ের হিসাব খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, মিয়ানমার আরকান রাজ্যে লাগাতার সহিংসতার মধ্যেও টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে ২৫ কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫০ টাকার বিভিন্ন প্রকার মালামাল আমদানি করতে সক্ষম হয়। এই সমস্ত মালামাল থেকে সরকার গত নভেম্বর মাসে প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪ টাকার মালামাল রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা আব্দুল মন্নান আরো জানান, পাশ্ববর্তীদেশ মিয়ানমারে সাম্প্রাদায়ীক সহিংসতার কারনে গত দুই মাস ধরে মিয়ানমারের মংডু শহর থেকে কোন প্রকার মালামাল আমদানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। তবে স্থলবন্দর ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমারের আকিয়াব শহর থেকে বেশি টাকা মুনাফা দিয়ে ২৫ কোটি টাকার মুল্যের বিভিন্ন প্রকার মালামাল আমদানি করে। এই মালামাল থেকে গত নভেম্বর মাসে সরকার প্রায় ৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়। তার পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন প্রকারে পণ্য আকিয়াব শহরে রপ্তানী করতে সক্ষম হয়েছে ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরো জানান, মিয়ানমারের সহিংসতা, সাম্প্রাদায়ীক দাঙ্গা বন্ধ হয়ে গেলে টেকনাফ স্থল বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকারের পণ্য আমদানি, রপ্তানি করতে সক্ষম হবে। এতে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্বের আয় আরো দ্বিগুন বেড়ে যাবে।
You must be logged in to post a comment.