মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত আলোচিত শিক্ষক নারায়ণ হত্যার তিন বছর পার হয়ে গেলেও আদালতে চার্জশীট দিতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার তদন্তে ধীরগতি এবং বারবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলানোর কারণে তিন বছরেও চার্জশিট দাখিল হয়নি আদালতে। ফলে হতশায় ভুগছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। সেসময় থানা পুলিশ ঘটনার কারণ উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি সিআইডির হাতে হস্তান্তর হয়। ফলে হত্যায় জড়িত রয়েছে বলে যাদের বিরুদ্ধে গুঞ্জন উঠেছে তারা শিক্ষক নারায়ণ পরিবারের সদস্যদের মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকি দিচ্ছে। এতে তার পরিবার সদস্যরা কক্সবাজারের চকরিয়ার দিগরপানখালীস্থ নিজ বাড়ি ছেড়ে পৌর শহরের একটি ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেও ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। ফিরে পায়নি বেদখলীয় জমিটিও।
তাই পুরো পরিবারেই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে। এদিকে মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরাঘুরি করলেও নিজ এলাকা ছেড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে হতভাগা পরিবার। তাছাড়া এই মামলায় সরকারদলীয় প্রভাবশালী এক নেতার আত্মীয়রা সংশ্লিষ্ট থাকার গুঞ্জন ওঠায় তদন্তে ধীরগতি ও আদালতে মামলাটির চার্জশিট দিতে দেরি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাত ২টার দিকে মুখোশ পরিহিত ১৫-১৬ জনের একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত চকরিয়া পৌরসভার দিগরপানখালীর প্রফুল্ল কুমার দাশের বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা বাড়ির জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে বড় ছেলে শিক্ষক নারায়ণ কান্তি দাশ বাধা দিতে গেলে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। পরে গুরুতর আহত নারায়ণকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্য হয়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই জয় শংকর দাশ বাদী হয়ে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর ৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরও ১৫-১৬ জনকে আসামি করে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এতে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাজারবিল এলাকার মৃত নজু মিয়ার ছেলে মো. নুরুচ্ছমদ (৬০), একই এলাকার মৃত ছৈয়দ মিয়ার ছেলে মো. শাহ আলম (৩৫), মো.ওসমান (৩২), একই এলাকার মো.নুরুচ্ছমদের ছেলে বেলাল উদ্দিন (৩৫), মো.ফরিদ (৩৪), নুরুল আমিন (৩২) ও উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী এলাকার হাকিম মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ প্রকাশ আজিজসহ আরও ১৫-১৬ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই আসামি মো.নরুচ্ছমদ (৬০) ও মৃত ছৈয়দ মিয়ার ছেলে মো. শাহ আলমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসে। তবে এই মামলার অন্য আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাঘুরি করলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী জয় শংকর দাশ বলেন, আসামিরা প্রতিনিয়ত মামলা উঠিয়ে নিতে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ভয়ে আমরা নিজ বাড়ি ছেড়ে পৌরসভার চিরিংগা বাসা ভাড়া নিয়ে কোনো রকমে দিনযাপন করছি। এমনকি আমার একটা ব্যবসা ছিল সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি। সব কিছু চলে গেলেও আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের কারো কাছ থেকে সাক্ষী নেয়া হয়নি। তাই মামলাটি আদো কোন সুরহা হবে কিনা?
নিহতের বাবা প্রফুল্ল কুমার দাশ (৮৮) বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নারায়ণকে হারিয়েছি। আমি বেঁচে থাকতে আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির কক্সবাজার শাখার এসআই মো.জাহাঙ্গীর বলেন, মামলাটি এর আগে যারা তদন্ত করেছিল তারা বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। আমি এখন মামলাটির তদন্ত করছি।
তিনি আরো বলেন, মামলাটির তদন্ত কাজ অনেকটা শেষের পথে। অতি শীঘ্রই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করতে পারবো বলে আশা করছি।
You must be logged in to post a comment.