মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :
শশুর বাড়ির লোকজন বলছে আত্মহত্যা, কিন্তু গৃহবধূর গায়ে একাধিক আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় স্বামীর সংসারে করুণ মৃত্যু হয়েছে গৃহবধূ রিক্তা বেগম (১৯) এর। সে বান্দরবানের লামা পৌরসভার ছাগলখাইয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও মারুফা বেগমের কন্যা।
গত রবিবার বিকেলে চট্টগ্রামের হালিশহর ১১নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার শাপলা আবাসিক এর ভাড়া বাসায় গলায় ওড়না পেঁচানো মৃত দেহ উদ্ধার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার বিষয়টি নাটকীয় মনে হওয়ায় নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাহাড়তলী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম। সোমবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে গৃহবধূ রিক্তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। মামলা নং-১৭, তারিখ- ২৭ নভেম্বর ২০১৭ইং।
জানা গেছে, পৌরসভার ছাগলখাইয়া এলাকার রিক্তা বেগমের সাথে ২০১৬ সালের মে মাসে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের লম্বাচডা গ্রামের আলী আকবরের ছেলে ফখরুদ্দিনের সাথে। দেড় বছরের সংসার জীবন কখনও সুখের ছিলনা বলে জানায় রিক্তার মা মারুফা বেগম ও প্রতিবেশী কয়েকজন। সবসময় মারধর ও ঝগড়া লেগে ছিল। রিক্তাকে নিয়ে তার স্বামী ফখরুদ্দিন চট্টগ্রামে বাসা ভাড়া করে থাকত।
রিক্তার মা মারুফা বেগম বলেন, গত শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) আমার মেয়ে লামায় আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। পরেরদিন শনিবার বিকেলে স্বামীর সাথে মোবাইলে ঝগড়া করে চট্টগ্রাম চলে যায়। রবিবার সন্ধ্যায় মেয়ের জামাই ফোন করে জানায় আমার মেয়ে হৃদরোগে মারা গেছে। কিন্তু আমার মেয়ের লাশ কেন ময়না তদন্ত করেছে তার বিষয়ে কিছু জানায়নি মেয়ে জামাই।
মৃত দেহ শেষ গোসল করার কাজে নিয়োজিত লামার ছাগলখাইয়া এলাকার খাদিজা বেগম (৫১) ও বেগমজান প্রকাশ বেগুনী (৪৫) এই প্রতিবেদককে জানায়, লাশের গলায় ফাঁসির দড়ির কোন চিহ্ন নেই। দুই গালে কিল ঘুষির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া দুই হাত দড়ি দিয়ে বাধা হয়েছে এমন স্পষ্ট চিহ্ন বিদ্যামান। ধারনা করা হচ্ছে বালিশ চাপা বা গলা চেপে হত্যা করা হয়েছিল মেয়েটিকে।
রিক্তার স্বামী ফখরুদ্দিন জানায়, আমার স্ত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে কেন আত্মহত্যা করেছে সেটা আমি জানিনা। রোববার (২৬ নভেম্বর) সকালে আমার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল।
এই ঘটনায় দায়ের করা অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী অফিসার পাহাড়তলী থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক অধির চৌধুরী বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে মেয়ে ও ছেলের অভিভাবকের জিম্মায় রিক্তার জামাই ফখরুদ্দিনকে দেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বিষয়টি আমাদের কাছেও সন্দেহ লেগেছে।
You must be logged in to post a comment.