হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
তিনি আসলেই স্বার্থপর মা। যার কাছে নিজের জীবনের চেয়ে সন্তানের জীবনের স্বার্থটাই মূখ্য। তাই নিজের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সন্তানকে রক্ষায় পিছপা হননি। বুকে আগলে রেখে সন্তানকে বাঁচিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। উখিয়ায় বাঁশ বোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে দুর্ঘটনায় নিহত রোজিনা আক্তার (২৬) রোহিঙ্গা শিবিরে মুক্তি নামে একটি এনজিওতে কর্মরত ছিলেন। রোজিনা মারা গেলেও বুকে আগলে রেখে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখেছেন তার শিশুকন্যা মিথিলাকে (৩)।
রোজিনা সমস্ত শক্তি দিয়ে সন্তানের গায়ে বিন্দু পরিমাণ আঁচড়ও লাগতে দেননি। সন্তানকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রেখে গেছেন তিনি। ঘটনাটি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের। প্রত্যক্ষদর্শী শফিক আজাদ এ প্রতিবেদককে এই মর্মস্পর্শী ঘটনা শুনিয়েছেন।
আজাদ জানান, দুর্ঘটনার শিকার লোকগুলোকে উদ্ধারের শুরুতে এক রোহিঙ্গা নারী ও তার সন্তানকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। একপর্যায়ে রোজিনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওই সময় তার বুকে আগলে রাখা অবস্থায় একটি শিশুর দেখা মেলে। সবাই ধারণা করছিল, ওই শিশুটিও বোধহয় মারা গেছে। কিন্তু মায়ের বুক থেকে বের করে দেখা যায়, ওই শিশু সম্পূর্ণ অক্ষত। দেখে সবাই হতবাক হয়।
তিনি আরও বলেন, সন্তানের প্রতি কতটা ভালবাসা থাকলে একজন মা নিজের জীবন দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতে পারেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। সূত্র জানায়, উখিয়া উপজেলার বালুখালী পানবাজার এলাকার বাসিন্দা মনজুর আলমের স্ত্রী রোজিনা আক্তার। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মিথিলা (৩)।
রোজিনা মুক্তি কক্সবাজার নামে একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রোজিনার কর্ম এলাকা কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে। স্বামী মনজুর আলম চাকরিজীবি। বাড়িতে দেখাশুনা করার কেউ না থাকায় মিথিলাকে প্রতিদিন কর্মস্থলে নিয়ে যেতেন রোজিনা। সন্তানকে রোহিঙ্গা শিবিরে স্থাপিত ফ্রেন্ডলি সেন্টারে রেখে নিজের কাজ করতেন রোজিনা। প্রতিদিনের মত গত (সোমবার, ১৬ জুলাই) সন্তানকে নিয়ে টমটমযোগে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন রোজিনা আক্তার। তবে তার আর কর্মস্থলে পৌঁছা হয়নি। পথিমধ্যে অতিরিক্ত বাঁশবোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে টমটমটি। এ দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান রোজিনা। কিন্তু মায়ের বুকে সম্পূর্ণ নিরাপদে অক্ষত রয়ে যায় শিশু মিথিলা। দুর্ঘটনার পর থেকেই বারবার ভয়ে কেঁপে উঠছে মিথিলা।
পুলিশ জানায়, রোজিনার মরদেহ স্বামী মনজুর আলমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার দাফন প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনো ট্রাকের মালিক সনাক্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সকাল ৯ টায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার বালুখালী কাস্টমস এলাকায় একটি বাঁশবোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে টমটম, সিএনজি। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন মারা যায়। আহত হয় ২০ জন। স্থানীয় রেডক্রিসেন্ট ফিল্ড হাসপাতাল ও উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহতদের সেবা চলছে।
You must be logged in to post a comment.