মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় এলাকা বদরখালীতে প্যারাবন নিধনযজ্ঞ চলছে। গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বেশ কিছু দুর্বৃত্ত প্যারাবনের প্রায় দুই হাজারের অধিক বড় বড় বাইন ও কেওড়া প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীর মুহুরীজোড়া স্লুইস গেইট হতে ফিশারীঘাট পর্যন্ত এলাকায় এই নিধন যজ্ঞ চালায় দুর্বৃত্তের দল। এব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের রাতে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস হয়। ফলে ভেঙ্গে যায় বেঁড়িবাধ। এরপর উপকূলীয় এলাকায় বনায়নে এগিয়ে আসে জাপানের একটি এনজিও সংস্থা ওয়াইস্কা ইন্টারন্যাশনাল। এই এনজিও সংস্থাটি প্রতি বছর জাপান থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে এসে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় ব্যাপক বাইন ও কেওড়া গাছের চারা রোপন করে। পরবর্তীতে এসব চারা বড় হয়ে গাছে রুপান্তরিত হয়। ফলে এই গাছগুলো নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের অনেকটা ছায়া হয়ে রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, প্রকাশ্যে এসব প্যারাবন নিধন করা হলেও বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে দুর্বৃত্তরা প্রতিনিয়ত প্যারাবন নিধনে মেতে উঠেছে।
তারা আরো অভিযোগ করে জানান, বদরখালী সমিতির আওতাধীন লম্বাঘোনা একশ একর চিংড়ি প্রকল্প পরিচালনা কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ও হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত প্রকল্পের এরিয়া বাড়াতে কৌশলে প্যারাবন নিধনে মেতে উঠেছে। প্যারাবনের গাছগুলো দেখভাল করার শর্ত-সাপেক্ষে তাদের প্রকল্পটি লিজ দেয়া হলেও তারা সে শর্ত না মেনে গাছ নিধনে মেতে উঠেছে।
বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর বলেন, জাপান ভিত্তিক একটি এনজিও সংস্থা ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পর এসব প্যারাবন সৃজন করেছিলো। তবে এটি বদরখালী সমিতির জায়গা। পরে ওই প্যারাবনটি বদরখালী সমিতির নেতৃবৃন্দরা কয়েকজন সদস্যকে লিজ দেয় চিংড়ি প্রকল্পের জন্য। তবে, তিনি প্যারাবনের বড় বাইন ও কেওড়া গাছ কাটার খবর স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছেন বলে জানান। তিনি বিষয়টি বদরখালী সমিতির কয়েকজন ডাইরেক্টরকে জানিয়েছেন বলেও জানান। তবে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে অবহতি করেননি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মো.নাজমুল হুদা বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। বনবিভাগের কোন কর্মকর্তাও তার আমাদের জানাননি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে প্যারাবন নিধনের বিষয়টি জেনেছি। কারা এই প্যারাবন নিধনের সাথে জড়িত খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
You must be logged in to post a comment.