অনলাইন ডেস্ক :
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন দেশের প্রায় আট কোটি ভোটারের ১০ আঙুলের ছাপ লাগবে বলে জানিয়েছে ইসি। চলমান হালনাগাদের কাজ শেষে আগামী বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরপরই এই কাজ শুরু হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার সময় চার আঙুলের ছাপ দেওয়া ভোটারদের নতুন করে ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে আগামী বছর একটি কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইতোমধ্যে ১০ আঙুলের ছাপ দিয়ে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহকারীদের আর নতুন করে আঙুলের ছাপ লাগবে না।
গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় এসব তথ্য জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর।
এনআইডি-সংশ্নিষ্টরা জানান, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ। এর মধ্যে স্মার্টকার্ড পেয়েছেন মাত্র ৬ কোটির মতো ভোটার। স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় তাঁদের ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়া হয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৫ কোটি নাগরিককে নতুন করে দিতে হবে ১০ আঙুলের ছাপ।
ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরও অংশ নেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক আব্দুল বাতেন, যুগ্ম সচিব শাহেদুন্নবী চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা অঞ্চলের চারজন কর্মকর্তাকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তার পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তাঁরা হলেন- ঢাকা জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মনির হোসাইন খান, কেরানীগঞ্জের নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফরোজা খাতুন এবং ডেমরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আল আমিন।
অনুষ্ঠানে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, এনআইডি সেবার গতি বাড়াতে না পারলে নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভোটার তালিকায় আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই ভোটারযোগ্য কেউ যাতে তালিকা থেকে বাদ না পড়ে; পাশাপাশি দ্বৈত ভোটার যাতে কেউ না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের পুরস্কারের পাশাপাশি তিরস্কারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
এনআইডির মহাপরিচালক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট আপডেট করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাঁরা স্মার্টকার্ড নিয়েছেন, তাঁরা ১০ আঙুলের ছাপ দিয়েছেন। যারা ১০ আঙুলের ছাপ দেননি, আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁদের ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কমিশনের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এনআইডি সেবায় দালালদের তৎপরতা বন্ধে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চারপাশে দালাল শ্রেণি রয়েছে। প্রতিনিয়ত আপনাকে-আমাকে বিক্রি করছে তারা। এদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়বেন না। এবার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত নাগরিকদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সামনে আরও কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সভায় ঢাকার আঞ্চলিক পর্যায়ের এনআইডি সংশোধন, স্থানান্তর সংক্রান্ত আবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় জানানো হয়, এ পর্যন্ত মোট আবেদন পড়েছে ৩৯ হাজার ৩৫৩টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২০ হাজার ৯৪৫টি। আর অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে ১৮ হাজার ৪০৮টি আবেদন। সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ৬৪৮টি আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী নভেম্বর থেকে জানুয়ারির ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৩ সালে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা ২০২৪ সালে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ নির্বাচন করার পকিল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন।
You must be logged in to post a comment.