সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের মিলনমেলা : শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের মিলনমেলা : শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

Puza Durga - Ajit Himu 23-10-2015 (1)অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সভিউ:

মহালয়ায় প্রস্তুতি, ষষ্ঠী দিয়ে শুরু দশমীতে শেষ। ২৩ অক্টোবর পড়ন্ত বিকেলে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের মহা মিলনমেলা হয়েছিল। হিমালয় নন্দিনী, দূগতি নাশিনী দেবী দূর্গা শান্তির বারতা নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করতে মর্ত্যলোকে মাত্র ৫ দিনের আগমন ছিল ভক্তদের পাপ মোছন করে শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তা সম্পন্ন করে তিনি গজে (হাতি) চড়ে ফিরে গেলেন কৈলাশে। এ সময় দেবী দুর্গাকে শঙ্খ- উলুধ্বনি আর ঢোলের তালে তালে বিদায় জানান ভক্তরা। ২২ অক্টোবর নবমী ও দশমি তিথিতে শাস্ত্রিয় অনুষ্ঠানাদি শেষ হলোও বাকী ছিল বিসর্জন। দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে দুপুর আড়াইটা থেকে কক্সবাজার জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে, সংগীতের মুর্ছনায় নেচে-গেয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিমা নিয়ে উপস্থিত হন সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। একই সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে আসা ভক্ত ও পূজার্থী, দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক পর্যটক ও সকল ধর্মের মানুষের মাঝে ছিল আনন্দ-বিষাদের সুর। বিসর্জন অনুষ্ঠান দেখতে আসা মানুষের পদভারে মুখরিত ছিল উত্তরপ্রান্তে ডায়াবেটিস হাসপাতাল ও দক্ষিণে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের তিন কিলোমিটার বেলাভূমি জুড়ে।

এই বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমুদ্র সৈকতের মুক্তমঞ্চে জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক বাবুল শর্মার সঞ্চালনায় গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত বিসর্জনোত্তর সংক্ষিপ্ত সমাবেশ প্রধান অতিথি ছিলেন- সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।

বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, সাংসদ আশেক উল­াহ রফিক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ খোরশেদ আরা হক, জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে আহমদ হোসেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান, পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল সহ কক্সবাজারের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অথিতির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন- এ দেশের মাটি ও মানুষ অসম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। এদেশে সকল ধর্মের সহাবস্থানের কারণে একই সাথে ঈদ, পূজা, প্রবারনা, বড়দিন পালিত হয়। বিজয়া দশমীর এই মহামিলন মেলা আরো একবার প্রমানিত হলো অপূর্ব এ দৃষ্টান্ত। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সকলে বাঙ্গালীর চিরায়িত ঐতিহ্যে শারদীয় মাঙ্গলিক দেবী দূর্গা বিসর্জন মেলায় মিলিত হয়েছেন।

বিসর্জনোত্তর সমাবেশ শেষপর্বে কক্সবাজার জেলার পৌরহিত স্বপন ভট্টাচার্য্য পবিত্র গীতার মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে দেবী দূর্গাকে বিদায় জানানোর পর ধারাবাহিকভাবে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

সদর পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি দীপক দাশ ও সাধারণ সম্পাদক বাপপী শর্মা জানান, এবার ২ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানের পর ধারাবাহিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় সৈকতে উত্তাল ঢেউয়ে। কক্সবাজারের সব মণ্ডপের প্রতিমা সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে এবং পুরো ৫দিন ব্যাপী উৎসবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি।

তারা বলেন সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রত্যয় ঘোষণা হল। এতে সব ধর্মের মানুষ শামিল ছিল। এ উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সম্প্রীতির এক সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। আর এ বন্ধনে সবাই এক সুরে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার।

এসময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, র‌্যাব, সরকারের সকল গোয়েন্দা সহ কক্সবাজারের সকল মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কক্সবাজার সদর পূজা উদযাপন পরিষদের এ নেতাদ্বয়।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, স্বর্গলোকের কৈলাশ শৃঙ্গ থেকে জগজ্জননী দুর্গা মর্ত্যে আসেন তার সন্তানদের অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য। তাই পৃথিবীর মানব সন্তানেরা প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকে দুর্গার জন্য। দশভূজা দেবী দুর্গা শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্তলোকে আসেন। সঙ্গে আসেন তার দুই মেয়ে লক্ষ্মী, সরস্বতী আর দুই ছেলে গণেশ ও কার্তিক।

“মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মুলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।” হিন্দু পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী এসেছেন অর্শ্বে (ঘোড়া), গেলেন গজে (হাতি)।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, দেবী অর্শ্বে (ঘোড়া) আসা মানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বার্তা দেয় আর গজে (হাতি) গেলে পৃথিবী হয় সুজলা-সুফলা শষ্য-শ্যামলা হয়।

এদিকে একই সময় কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী, রামুর বাঁকখালী, টেকনাফর সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতেও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

এ সময় বিসর্জনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়। প্রসঙ্গত-এবার জেলার ২৭৬টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/