মুকুল কান্তি দাশ, চকরিয়া:
বগুড়া জেলার কাহালু থানার মালঞ্চাসহ পাশাপাশি তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। সম্পর্কে বন্ধু ও পরস্পর আত্মীয়। দীর্ঘ তিনমাস পরিকল্পনা আটে পর্যটন জেলা কক্সবাজারে পিকনিক করতে যাবেন। ফলে শিশু-মহিলাসহ ৫৩জন একজোট হয়ে বিজনেস বাস ভাড়া করেন তারা। ৬ অক্টোবর বগুড়া থেকে রওনা দেন বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজারের উদ্দ্যেশে। ৯ অক্টোবর কক্সবাজার শহরে পৌছে বাঁধভাঙ্গা আনন্দে ভাসেন তারা। কিন্তু সে আনন্দ শোকে রুপ পায় এক সপ্তাহ পর ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার। এদিন সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দ্যোশে কক্সবাজার থেকে ফিরতী পথে যাত্রা করেন। এসব তথ্যদেন পিকনিক পার্টির সদস্য আহত শহিদ, নজরুল ও আতাউর। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়াস্থ বরইতলী রাস্তার মাথা নামক স্থানে পৌছলে বাসটি (নং-ঢাকা মেট্রো ব- ১৪-৪৬২৩) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশ্ববর্তী খাদে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে মারা যায় গাড়ির মালিকের ভাতিজা ও অতিরিক্ত চালক তপন চন্দ্র সরকার (৩৫)। তিনি বগুড়া সদরের জয়পুরার কালীপদ চন্দ্র সরকারের ছেলে।
যাত্রীদের ভাষ্যমতে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর অতিরিক্ত চালক তপন লাফ দিলেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। গাড়ির নিচে পড়ে পানিতে তার দেহ ডুবে যাওয়ায় মারা যান। এ দুর্ঘটনায় ওই গাড়ির কর্মচারীসহ আহত হন ৫৫ জন। মূল চালক অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে যান।
আহত ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের ৫৩ জনের মধ্যে সবাই কমবেশী আহত হয়েছে। তাদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্থানীয় প্রাইভেট হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জীবন বাঁশি দাশ বলেন, আহতদের মধ্যে ২৬ জনকে এই সরকারী হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় দমকল বাহিনী ও পুলিশের লোকজন। সাথে সাথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল চিকিৎসক তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন । হাত-পা ভেঙ্গে যাওয়া গুরুতর আহত ১০জনকে চমেক হাসপাতালে রেফার, একজনকে এই হাসপাতালে ভর্তি ও অপর আহতদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রেফারসহ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া আহতরা হলেন- শহিদুল ইসলাম শানু (৪৬), নজরুল ইসলাম (৪০), আতাউর রহমান (৪৯), ফিরোজ ৫৫), নাসির মোল্লা (৫০), খোকন (১৯), মো: আইয়ুব (৩৫), মো: কাদের (৩০), রমজান মোল্লা (৫২), নাজেম উদ্দিন (৫০), সাঈদী (৪০), হাবিবুর (২০), আবদুল করিম মন্ডল (৩৫), সৈয়দ নুর (৫৫), তার স্ত্রী শ্যামলী মুক্তি (৪৫), তার ছেলে সম্রাট (২৩), পুত্রবধু (২০), নাতনী সানজিদা (৮), তানসিন (২৪), নাসির উদ্দিন ৪৫), আবদুল কাদের (৪৫), আরিফুল ইসলাম (২৫), আবুল কালাম (৫২), মো: আলম (৩৫), আশরাফুল হক (৩২), মো: ফারুক (২২)।
আহতরা সবাই বগুড়ার কাহালু উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে অধিকাংশই মালঞ্চা ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের বলে আহতরা জানান।
দুর্ঘটনার অন্তত ৩৫ মিনিট পর পানি থেকে তপনের মরদেহ উদ্ধার করেন চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এসময় যাত্রী ও তাদের মালামালের নিরাপত্তা দিতে একদল পুলিশ নিয়ে ছুটে যান চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধর ও চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ফয়েজুর রহমান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাহেদুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহমদ হোসেন ভুঁইয়া। এই রিপোর্ট লেখার সময় আহতদের নিজ এলাকায় পৌছে দিতে ব্যবস্থা করছিলেন চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন। খাদে পড়া গাড়িটি ক্রেন দিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। নিহত তপনের মরদেহ চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আনা হয় কক্সবাজার সদর হামপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত করতে পাঠানোর জন্য।
You must be logged in to post a comment.