সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / চার্জসীটভুক্ত মানব পাচারকারীরা প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরচ্ছে

চার্জসীটভুক্ত মানব পাচারকারীরা প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরচ্ছে

চার্জসীটভুক্ত মানব পাচারকারীরা প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরচ্ছে

চার্জসীটভুক্ত মানব পাচারকারীরা প্রকাশ্যে বীরদর্পে ঘুরচ্ছে

অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সভিউ:

পুলিশের খাতায় এতো দিন ছিলো পলাতক। অথচ প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছে শীর্ষ মানবপাচারকারী দলের লিডার উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি এলাকার রুস্তম আলী মাঝি। অবশেষে শনিবার সকালে সোনারপাড়া বাজার হতে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। কিন্তু তার সহযোগী মানবপাচারকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা ও বীরদর্পে প্রশাসনের নাকের ডগায় বিচরণ করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের গ্রেফতার না করায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভের। তালিকাভুক্ত ও চার্জসীটে অর্ন্তভুক্ত মানবপাচারকারী রেজিয়া আক্তার রেবি ম্যাডাম সহ ডজনখানেক মানবপাচারকারী এখনো ধরাছোয়ার বাইরে। সাম্প্রতিক সময়ে রেবি ম্যাডাম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও আদালত কর্তৃক জামিন প্রাপ্ত হয়ে পূর্বের চাইতে আরো ব্যাপক উত্সাহ উদ্দিপনা নিয়ে মানব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, থাইল্যান্ডের সীমান্ত জঙ্গলে পাচার হওয়া বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গা নাগরিদেরগন কবর আবিস্কার এবং সে দেশের দালালদের গ্রেফতারে থাই পুলিশ তত্পর হলে তত্সময়ে বাংলাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নড়ে বসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মালেশিয়ায় মানবপাচারে জড়িত শীর্ষ দালারদের একটি নামের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে প্রেরন করা হয়।

চলতি বছর মে মাসে এক সপ্তাহে কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মানবপাচারের জড়িত দালালদের গ্রেফতার ও অভিযান চলাকলে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে ৫ জন শীর্ষ মানবপাচারকারী নিহত হন। এর পরও থেমে থাকেনি মানবপাচার।

পুলিশের হেডকোয়ার্টার মানবপাচারের জড়িত দালাদের তালিকা জেলার বিভিন্ন থানায় প্রেরণ করে। শুরু হয় পুলিশের চিরুনী অভিযান। কিছু দালাল তত্সময়ে ধরা পড়লেও বেশীর ভাগ দালাল এলাকা হতে গা ঢাকা দেয়।

উখিয়ার শীর্ষ দালাদের মধ্যে সোনাপাড়া নুরুল কবির ও তার স্ত্রী রেজিয়া আক্তার প্রকাশ রেবি মেড্যাম, জালিয়াপালং সোনাইছড়ির রুস্তম আলী মাঝি, ছেপটখালীর ফয়েজ, লম্বরী পাড়ার বেলাল প্রকাশ লাল বেলাল, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর মধ্যম নাপিতখালীর নুরুল আজিম, সোনাপাড়া ঘাটঘরের মৌলভী আবদুল­াহ, সোনারপাড়ার মোহাম্মদ কাদের, পশ্চিম সোনাইছড়ির মুজিবুল হক ও একই এলাকার মাহাদ প্রকাশ মাদু। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এরা পুলিশী গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে গেলেও গত কোরবানেরর ঈদের আগে থেকে তারা ফিরে আসে এলাকায়। অনেকটা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা শুরু করে। নুরুল কবির ও তার স্ত্রী রেজিয়া আক্তার প্রকাশ রেবি মেড্যাম ফের চলে যায় আত্ম গোপনে। অবশ্য কেউ কেউ অপহরণ হয়েছে বলেও প্রচার করে।

এদিকে, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রয়ারী মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে স্বল্প টাকায় অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকজনকে কক্সবাজার নিয়ে আসে। সেখান থেকে পরের দিন ১৭ ফেব্রয়ারী মানবপাচারকারী নুরুল আজিম ভিকটিম মোঃ সুমন ও মোঃ আলীসহ অন্যান্যদের সিএনজিতে তুলে দিলে তাদের উখিযা উপজেলার সোনারপাড়া বাজারস্থ জব্বারিয়া হোটেলের সামনে নিয়ে যান। ভিকটিম মোঃ সুমন ও মোঃ আলী সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য রাজি না হলে দালালেরা তাদেরকে টানা হেচড়া করে বোটে তুলার চেষ্টা করে। তারা চিত্কার করলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয় এবং ঘটনাস্থলে ইনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আলা উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপস্থিত হলে দালালেরা পালিয়ে যায়। ভিকটিমদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এঘটনায় এসআই আলা উদ্দিন বাদি হয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে রুস্তম আলী মাঝিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে (উখিয়া থানার মামলা নং-২০/ জিআর-৬০, তাং-১৯/০২/২০১৫) মামলা দায়ের করেন।

এই মামলাটি প্রথমে উখিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরবর্তীতে তদন্তের ভার পড়ে সিআইডিতে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্গানাইজড ক্রাইম (সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়ার্ড) বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকার এসআই রিপন চন্দ্র সরকার তদন্ত করে চলতি বছর ২৪ জুলাই ৭ মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র (চার্জসীট) দাখিল করেন আদালতে। চার্জসীট ভুক্ত মানবপাচারকারীরা হচ্ছে, উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি এলাকার মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে রস্তম আলী, একই ইউনিয়নের সোনারপাড়ার ঘাটঘরের বদি আলম মেকারের ছেলে মৌলভী আবদুল­াহ, সোনারপাড়ার ছৈয়দ কাসেশের ছেলে মোঃ কাদের, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর মধ্যম নাপিতখালী গ্রামের মৃত হাজি ইসহাক সওদাগরের ছেলে নুরুল আজিম, পশ্চিম সোনাইছড়ির মৃত সোলতানের ছেলে মুজিবুল হক, একই এলাকার আবু ছৈয়দের ছেলে মাহাদ প্রকাশ মাদু, জালিয়াপালং লম্বরীপাড়ার মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে বেলাল প্রকাশ লাল বেলাল। এছাড়াও এসব মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে আরো অর্ধডজন মামলা।

এসব মামলার আসামীরা পুলিশী গ্রেফতার এড়িয়ে গোপনে থাকলেও গত কিছুদিন ধরে তারা জনসম্মুখে চলে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়েরকৃত মামলার চার্জসীট ভুক্ত আসামী রুস্তম আলী মাঝিকে অবশেষে ১০ অক্টোবর শনিবার সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মানবপাচারকারী রুস্তমকে উখিয়া থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানা, কক্সবাজার সহ বিভিন্ন থানা ও সিআইডিতে ১০-১২ টি মামলা তদন্তে রয়েছে বলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন।

ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনজার্জ এসআই প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, প্রতি রাতেই উপকূলে মানবপাচারকারী ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/