অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সভিউ:
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় মাত্র এক থেকে পাঁচ হাজার টাকায় অর্ধবছরের জন্য মহাজনদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে শত শত জেলে। আর এ সময়ে জেলেদের অনেকটা জিম্মি কিংবা দাস হিসেবে ব্যবহার করছে দাদন ব্যবসায়ীরা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেদের সাগরে ইলিশ মাছ ধরতে বাধ্য করছে তারা। এক্ষেত্রে দাদন ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে চালানো হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতন।
আধুনিক এ যুগে কাগজে-কলমে দাস প্রথা নেই। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সাধারণ জেলেদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে তা দাস প্রথার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বিশেষ করে কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ এবং উখিয়া এমনকি বৃহত্তর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, বাঁশখালী এলাকার জেলেরা মহাজনদের দাদনের টাকায় এ দাস প্রথার সাথে জড়িয়ে পড়ছেন।
মাছ ধরার মৌসুমের শুরুতে নানা কৌশলে দাদন ব্যবসায়ীরা মাত্র ১ থেকে ৫ হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছে অভাবী এ সব জেলেদের। পরবর্তীতে চক্র বৃদ্ধিহারে বাড়তে থাকে এ টাকার সুদ। সুদসহ টাকা দিতে না পারলেই চলে অমানুষিক নির্যাতন।
ইলিশের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সব ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর পর শুরু হবে পুরোদমে মাছ ধরার মৌসুম। তাই এখই থেকে শুরু হয়ে গেছে দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম। কিন্তু দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে সরকারি কোনো উদ্যোগেই অংশীদার হতে পারছেন না জেলেরা।
দাদন ব্যবসায়ীদের নির্যাতনের শিকার কয়েকজন জেলে জানান, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে আমরা আটকা পড়েছি। তারা আমাদেরকে মারধর করে সাগরে পাঠায়। যদি যেতে না চায়, তবে বাড়ী থেকে ধরে এনে সুদ সমেত টাকা ফেরত দিতে বলে। অন্যথায় চলে অমানুষিক নির্যাতন। ফলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আটকও হচ্ছেন সাধারণ জেলেরা। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারে না সরকার।
এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইকবাল হারুন’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যদি জেলেরা দাদন ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আমাদের কাছে বলেন, তারাই সাগরে যেতে বাধ্য করেছে, তবে আমরা ওইসব দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করব।
মৎস্য আহরণ বন্ধের কারণে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন অংশ থেকে অন্তত পাঁচশ জেলেকে আটক করেছে কোস্টগার্ড।
You must be logged in to post a comment.