শুধুমাত্র বোরো আতপ চাল সংগ্রহের কমিশন থেকেই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাতিয়ে নিয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা। নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বদলী আদেশের পরও অজ্ঞাত কারণে দিব্যি বহাল রয়েছে উক্ত কর্মকর্তা তানভির হোসেন। তাকে নানা দুর্নীতিতে সহায়তা করছে কারিগরি খাদ্য পরিদর্শকের পদের কথিত প্রধান সহকারি হিসাবে পরিচিত রোকসানা আক্তার। বোরো চাল সংগ্রহের অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে আসা কর্মকর্তাদের কৌশলে হোটেলে রেখে তদন্ত থেকে বিরত রেখে নিজের দুর্নীতিকে আড়াল করেছে।
কমিশন বাণিজ্য থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় হতাশ কৃষক ও রাইচ মিল মালিকরা।
জানা যায়, জেলায় খাদ্য সংকট দূরীকরণে অভ্যন্তরীন কৃষকদের কাছ থেকে নায্যমূল্যে বোরো আতপ চাল সংগ্রহ শুরু হয়। ১ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৮ হাজার ৪শ ৯২ মে: টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সরকার কৃষকদের জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয় কেজি প্রতি ৩১ টাকা। উক্ত সময়ের মধ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেননি। ফলে ১ মাস অতিরিক্ত সময় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করলেও চাল সংগ্রহ করে ৬৩৬৩ মে: টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১১৯ মে: টন কম। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে বোরো চাল সংগ্রহের নির্দেশ থাকলেও জেলার ২৮ টি রাইচ মিল মালিকদের কাছ থেকে উক্ত চাল সংগ্রহ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির।
সরকারি মূল্য ৩১ টাকা কেজি দর নির্ধারণ হলেও প্রতি কেজিতে ২ টাকা করে কমিশন বাবদ কেটে ২৯ টাকা দাম নিয়েছে খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির ও উক্ত রোকসানা সিন্ডিকেট। ফলে ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার কেজি বোরো চাল থেকে ২ টাকা করে ১ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উক্ত সিন্ডিকেট।
কথিত অফিস সহকারি রোকসানা আক্তার টন প্রতি ১৩০০ টাকা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের উৎকোচ। এছাড়া ৫ বছর যাবৎ উক্ত মহিলা নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে একই অফিসে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দিয়েছে দুর্নীতির শিকার হওয়া রাইচ মিল মালিকরা।
অপরদিকে তালিকাভুক্ত রাইচ মিল মালিকদের কাছ থেকে জামানতের চেক অবমুক্ত করতে জনপ্রতি অর্থাৎ ২৮ জনের চেক অবমুক্ত করতে ৫ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উক্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির।
অপরদিকে নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ১৩ অক্টোবর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো: তানভির হোসেনকে স্ববেতনে ঢাকা খাদ্য অধিদপ্তরে ওএসডি করা হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন উক্ত কর্মকর্তা।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা হয়নি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে খাদ্য কর্মকর্তার নানা অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে চট্টগ্রাম খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: আশরাফুল আলম ২৭ অক্টোবর তদন্তে আসলে কৌশলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির অফিসে না এনে হোটেল কক্ষে তদন্ত শেষ করে নানা অপকর্ম ধামাচাপা দিয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান।
নানা অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্য বিষয়ে কথিত প্রধান সহকারি রোকসানা আক্তারের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি কোন কিছু জানতে চাইলে অফিসে আসেন বলে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: তানভির হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল রিসিভ না করা বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
দুর্নীতিবাজ উক্ত কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারির অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্য তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত রাইচ মালিকরা।
You must be logged in to post a comment.