সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / লামায় ভোটার হতে অহরহ রোহিঙ্গা নাগরিকের আবেদন জমা !

লামায় ভোটার হতে অহরহ রোহিঙ্গা নাগরিকের আবেদন জমা !

 

https://i0.wp.com/coxview.com/wp-content/uploads/2022/07/Fake-Certificate-Rafiq-15.07.2022-1.jpg?resize=620%2C475&ssl=1

রোহিঙ্গা নয় প্রত্যয়নপত্র রোহিঙ্গার হাতে

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :
এলাকায় চিহ্নিত রোহিঙ্গা মোঃ ফরিদ আলম। বর্তমানে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাঁশখাইল্যা পাড়ায় বসবাস করেন। গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাশ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের এই নাগরিক ৭/৮ বছর আগে লামায় এসে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড কুমারী বাজার এলাকার মির আহামদের মেয়ে ফাতেমা আক্তার কে বিয়ে করেন। দুই বছর আগে তাদের তালাক হয়ে যায়। তালাকের আগেই সে ভোটার হওয়ার জন্য শশুর বাড়ির সকলের জাতীয় পরিচয় পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখেন।

এদিকে সারা দেশের ন্যায় গত ২৫ জুন থেকে লামা উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়। এই সুযোগে রোহিঙ্গা নাগরিক মোঃ ফরিদ আলম শশুর মির আহামদকে বাবা, শাশুড়ি জমিলা বেগমকে মা, শ্যালক আব্দুর রহিম, রশিদ আহমদকে বড় ভাই এবং শালিকা মাহমুদা আক্তারকে বড় বোন বানিয়ে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইয়াংছা নতুন পাড়ার ঠিকানায় ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এর সাথে ভোটার হতে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, হালনাগাদ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, রোহিঙ্গা নয় সনদ, নিজের চাচা ফুফু থাকা সত্ত্বেও নাই মর্মে প্রত্যায়ন, বিলম্বে ভোটার হওয়ার প্রত্যায়নপত্র, ভূমিহীন সনদ, হোল্ডিং করের রশিদ সহ অন্যান্য কাগজপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করেন। প্রতিটি কাগজে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দ্বারা সত্যায়িত করেছেন। ইতিমধ্যে তার আবেদনের কপি তথ্য সংগ্রহকারী কর্তৃক পূরণ করে সুপারভাইজার নিকট জমা হয়েছে।

https://i0.wp.com/coxview.com/wp-content/uploads/2022/07/Fake-Certificate-Rafiq-15.07.2022-2.jpg?resize=620%2C620&ssl=1

লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে চিহ্নিত রোহিঙ্গা নাগরিকের হাতে চেয়ারম্যান সনদ, রোহিঙ্গা নয় প্রত্যায়নপত্র সহ ভোটার হওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ওয়ার্ড ৭, ৮, ৯, ৪ ও ১ এর অংশের দায়িত্বরত সুপারভাইজার মোঃ নাজেম উদ্দিন সন্দেহবশত কয়েকটি ফরম সরেজমিনে তদন্ত গেলে বিষয়টি বেরিয় আসে। আবদনে ফরিদ আলম বাবার নাম মির আহামদ লিখলেও সরেজমিনে গিয়ে এলাকার সবার সাথে কথা বলে জানা যায় তার বাবার নাম নূর ইসলাম। তারা রাহিঙ্গা নাগরিক। নাজেম উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা সন্দেহ যাচাই বাছাই এর জন্য ৯নং ওয়ার্ডের ২০টি, ৭নং ওয়ার্ডের ১০টি ও ৮নং ওয়ার্ডের ৮টি আবেদন তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে আমি নিয়েছি। ইতিমধ্যে অনেক গুলো রোহিঙ্গা নাগরিক বলে নিশ্চিত হয়েছি।

https://i0.wp.com/coxview.com/wp-content/uploads/2022/07/Fake-Certificate-Rafiq-15.07.2022-3.jpg?resize=620%2C620&ssl=1

স্থানীয় চেয়ারম্যান কর্তৃক সত‍্যায়িত মোঃ আলম’র অনলাইন জন্ম নিবন্ধন

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের তথ্য সংগ্রহকারী মোঃ তহিদুল ইসলাম বলেন, এলাকায় রোহিঙ্গা হিসাবে চিনে এইরকম ৩টি পরিবারের ৮জন ভোটার হওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা সকল কাগজপত্র কিভাবে যোগাড় করল? বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। একইভাবে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শামুকছড়া মুখ গ্রামের মোঃ মফিজ, পিতা- মোস্তাহিন, ৯নং ওয়ার্ডের বনপুর গ্রামের সফিক আহামদ মেয়ে খালেদা বেগম, জয়নাল উদ্দিনের মেয়ে কহিনুর আক্তার, আবু তালেব এর মেয়ে ফাতেমা বেগম, বাঁশখাইল্যা ঝিরির আব্দুর রশিদের ছেলে মোহাম্মদ সৈয়দ নুর, ৫নং ওয়ার্ডের রাঙ্গাঝিরি গ্রামের মহি উদ্দিনের স্ত্রী হামিদা বেগম, ৬নং ওয়ার্ডের হায়দারনাশী গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ সহ অহরহ রোহিঙ্গা নাগরিকের ভুয়া আবেদন ইতিমধ্যে জমা পড়েছে। অনেক তথ্য সংগ্রহকারী বলেন, আমরা এইসব আবদন না নিতে চাইলে আমাদের ফোনে হুমকি দেয়া হয়। রোহিঙ্গারা কৌশলে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভোটার হওয়ার চিত্র উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে লক্ষ্য করা যায়। তবে কম আর বেশি।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, ১নং ওয়ার্ডের গয়ালমারা (একাংশ), সাপেরঘারা, ২নং ওয়ার্ডের হারগাজা, ৯নং ওয়ার্ডের বাঁশখাইল্যা ঝিরি, বনপুর বাজার পূর্ব পাশ, নতুন পাড়া, ৫ ও ৩নং ওয়ার্ডের কিছু কিছু স্থানে রোহিঙ্গাদের হটস্পট। আগে যেসব রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে এখন তাদের পরিবারের লোকজন ভোটার হচ্ছে। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। ইয়াংছা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, রোহিঙ্গা পরিবারের সন্তানেরা এখন সাংবাদিক, ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগের সরকার দলীয় নেতা।

এই বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাং নুরুল হোসাইন চৌধুরী বলেন, আজ ১৫ জুলাই ৯নং ওয়ার্ডের ২৬টি ভুয়া আবেদনের কাগজপত্র বাতিল করেছি। গণশুনানী করে ভোটার যাচাই বাছাই করা হবে। কিভাবে রোহিঙ্গারা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, হালনাগাদ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, রোহিঙ্গা নয় সনদ, নিজের চাচা ফুফু থাকা সত্ত্বেও নাই মর্মে প্রত্যায়ন, বিলম্ব ভোটার হওয়ার প্রত্যায়নপত্র, ভূমিহীন সনদ, হোল্ডিং করের রশিদ পেয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সবাইকে চিনিনা। মেম্বাররা সুপারিশ করেছে আমি সনদ দিয়েছি। খালি ফরমে স্বাক্ষর ও সীল দেয়ার বিষয়ে বলেন, কাজ দ্রুত ও সহজ করতে যাদের চিনি তাদের খালি ফরমে স্বাক্ষর করা হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, সরকার চায়না কোনভাবে ভিন দেশের মানুষ ভোটার হোক। বিষয়টি জন‍্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেম্বার, তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের একাধিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এরপরও এইরকম অসংগতি মেনে নেয়া যায়না।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনের পিতার মৃত্যু : বিভিন্ন মহলের শোক

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনের পিতা হাজী নূর ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/