উদ্বোধনের চার বছর অতিক্রম হয়েছে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত রেল লাইন স¤প্রসারণ কাজের। উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সবই হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার জেলাবাসী স্বপ্নের সেই রেল লাইনের দেখা না পেলেও। দীর্ঘ চার বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার-রামু-ঘুমধুম রেল লাইন প্রকল্প। তবে এবার আর মিটার গেজ সিঙ্গেল লাইন নয়। ব্রডগেজসহ ডুয়েল লাইনের মাধ্যমে দু’হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে সরকার। ভূমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি শুরু হয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়াও। তবে বার বার পেছানোর কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
যদি এ প্রকল্প প্রায় দু’যুগ আগে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমান সরকারের আমলেই তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেল লাইন প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেন। মাঝে নানা আইনী জঠিলতার কারণে এ প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত থাকা রেললাইনকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত বিস্তৃত করার কাজ ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় বারবার হোঁচট খাওয়া এ প্রকল্প শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আগের নকশা অনুযায়ী মিটার গেজের রেল লাইন হওয়ার কথা থাকলেও এবার হচ্ছে ব্রডগেজসহ ডুয়েল লাইন।
আর এ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে ৩শ’ ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করার পর আবার নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬শ’ ৫ কোটি টাকা। আগামী বছর টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হবে পুরো কাজ, এমন লক্ষ্যের কথা জানালেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এবং দোহাজারী-ঘুমধুম রেল লাইন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ বার বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে প্রকল্প ব্যয়। শুরু’র দিকে এর প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার কোটি টাকা থাকলে এখন তা দু’হাজার কোটি টাকার বেশি।
মূলত ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হিসেবে এ রেল লাইন ঘুমধুম পর্যন্ত বিস্তৃত করা হচ্ছে বলে জানালেন দোহাজারী-ঘুমধুম রেল লাইন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন শহর কক্সবাজার রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এর ফলে পর্যটন শিল্পের যেমন বিকাশ ঘটবে, তেমনি বিস্তৃত হবে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। তখন পর্যটন খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটন শহর কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়বে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নূর-ই আলম জানান, ‘প্রকল্পটি প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত ছিল। পরবর্তীতে আলাদা রেল মন্ত্রণালয় গঠন হওয়ায় প্রকল্পটি আমাদের হাতে নেই। তাই এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষই দেখেন। এতে আমাদের সম্পৃক্ত বেশী একটা নেই।’ এরপরও অগ্রগতির বিষয়ে কাগজপত্র দেখে বলতে পারবেন বলে তিনি জানান।
পূর্বঞ্চলীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পভুক্ত জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৩শ’ ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করার পর আবার নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬শ’ ৫ কোটি টাকা। অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী বছর টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হবে পুরো কাজ আগামী এক বছরে মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
You must be logged in to post a comment.