আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী। আজ শোকের দিন।
১৯৭৫ সালের এই দিন ভোররাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে একদল বিপদগামী সেনাসদস্য। ঘাতকদের হাতে একে একে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
নির্মম হত্যাকাণ্ডের আরো শিকার হন বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের; ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত; বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন।
ওই দিন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্থপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার সরকারি ছুটি। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। উড়বে কালো পতাকা।
টিভি-রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে।
দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘বঙ্গবন্ধুর নাম চির অমলিন ও অক্ষয় থাকবে’
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেছেন, “যত দিন এ দেশ ও জনগণ থাকবে, তত দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন ও অক্ষয় হয়ে থাকবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক বেদনাবিধুর ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ এবং নিকট আত্মীয়সহ শাহাদাত বরণ করেন।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা অর্জনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। তারই নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অর্জন করে বহু কাক্ষিত স্বাধীনতা।…তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা।”
রাষ্ট্রপতি জাতীয় শোক দিবসে ১৫ আগস্ট শহদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
‘বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনাদর্শ বাঙালির অন্তরে প্রোথিত’
জাতীয় শোক দিবসের বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ বাঙালি জাতির অন্তরে প্রোথিত হয়ে আছে।”
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে জাতির পিতাসহ সেদিনের সব শহীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
সরকারি কর্মসূচি
সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং সংবাপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
এদিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত হবে মোনাজাত ও কোরআন তেলওয়াত।
এ ছাড়া ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী অন্য শহীদদের বনানী কবরস্থানে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদানসহ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
একই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় সকাল ১০টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
-নতুনবার্তাডটকম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.