নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া:
কক্সবাজার জেলার উখিয়ার উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী আরফাত হোসেন (২২) হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিমর্ম হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তেজিত গ্রামবাসী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। এ সময় পুত্রশোকে কাতর মায়ের আহাজারিতে ফারিরবিল গ্রামে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হতে দেখা গেছে।
১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে পালংখালী ইউনিয়নের ফারিরবিল গ্রাম ঘুরে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইয়াবা ও সার পাচারের ঘটনায় পাচারকারীর সাথে বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির জের ধরে যুবলীগ কর্মী আরফাত হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা হাফেজ জাকের হোসাইন জানান, একই গ্রামের হাসান আলীর ছেলে নুর মোহাম্মদ সহ ৭/৮ জন পাচারকারী ওয়াকফ্ ষ্টেটের রাস্তা দিয়ে সার পাচার করছিল। এ সময় প্রজেক্টে কর্মরত জাফর আলমের ছেলে আরফাত হোসেন বাধা দিলে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
তিনি আরও জানান, প্রজেক্টের জমিতে আমন চাষাবাদের কাজ করার জন্য আরফাত হোসেন প্রতিপক্ষ মোহাম্মদ তৈয়ব প্রকাশ বাইট্টায়াকে অগ্রিম ৫ হাজার টাকা প্রদান করে। অথচ সে তার কাজ না করে অন্যের জমিতে কাজ করতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্কের জের ধরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সার ও ইয়াবা পাচার এবং টাকা লেনদেনের ঘটনা নিয়ে আরফাত পরিবার ও প্রতিপক্ষ পাচারকারীদের মধ্যে ইতিপূর্বে বেশ কয়েক বার হামলা, পাল্টা হামলায় আরফাত পরিবারের ৪/৫ জন সদস্য আহত হয়েছে।
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ৯নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি আবুল কালাম জানান, এ ঘটনা নিষ্পত্তির জন্য ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বটতলী এলাকায় হাজী কামাল হোসনের নেতৃত্বে বেঠকের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছিল। বৈঠকের আগেই প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় অপেক্ষমান আরফাত হোসেনের উপর হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি জখম করে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, কর্তব্যরত ডাক্তার তার অবস্থা আশংকাজনক মনে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরফাত হোসেন মারা যায়। এ ঘটনায় আরফাতের পিতা জাফর আলম বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ ও তার ভাই ইব্রাহিম আজাদ সহ ১১ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে আরফাতের শোকাহত মা মমতাজ বেগমের (৪৫) প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বুক ফাঁটা আর্তনাদ করে সাংবাদিকদের আকুতি জানিয়ে বলেন, আমার নিরপরাধ ছেলেকে আলী আহমদের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার দাবী করছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে প্রতিপক্ষ ইব্রাহিম আজাদ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, আরফাত হত্যাকান্ডের সাথে তারা মোটেই জড়িত নয়। প্রতিপক্ষ হিসাবে হত্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান জানান, সংগঠিত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি তদন্ত কাজ চলছে। প্রকৃতপক্ষে, ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না।
You must log in to post a comment.