ভারতের টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা শনিবার মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বেধে উইম্বলডনে মহিলাদের ডাবলস খেতাব জেতার পরেই তাকে নিয়ে গোটা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে উন্মাদনা। মাত্র কয়েক মাস আগেও ভারতে কোনো কোনো রাজনীতিক যাকে ‘পাকিস্তানের বউ’ বলে কটাক্ষ করেছেন কিংবা সেই ইস্যুতে সানিয়াকে টেলিভিশনে চোখের জল ফেলতে হয়েছে– গোটা ভারত কিন্তু তাকে আজকে আবার আপন করে নিয়েছে। কিন্তু টেনিস জগতের সাফল্য নিজের ভারতীয়ত্ব প্রমাণে সানিয়া মির্জার দায় ঘোচাতে পারছে? লন্ডনে সানিয়া মির্জা যখন শনিবার মার্টিনা হিঙ্গিসকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের প্রথম উইম্বলডন খেতাব জিতছেন, ভারতে তখন অনেক রাত। কিন্তু সানিয়া মির্জাকে নিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস শুরু হতে দেরি হয়নি এতটুকুও। ভারতের চ্যানেলে চ্যানেলে তখন সানিয়া মির্জার প্রশংসা, সিঙ্গলস ছেড়ে ডাবলসে মনোযোগ দিয়ে তিনি কী দারুণ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তার বিশ্লেষণ।বিদেশ সফরে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি– ভোররাত নাগাদ তিনিও টুইট করে অভিনন্দন জানালেন সানিয়া মির্জাকে, জানালেন আমরা গর্বিত। ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদদের একজন, সাবেক ফুটবল অধিনায়ক ও বিশিষ্ট টেনিস খেলোয়াড় চুনী গোস্বামীও বলছিলেন এই সম্মান সানিয়া মির্জার প্রাপ্য। তিনি বলছিলেন, ‘সানিয়া নিঃসন্দেহে ভারতের সেরা মহিলা ক্রীড়াবিদ। হিঙ্গিসের ব্যাকহ্যান্ড আর সানিয়ার ফোরহ্যান্ড মিলে ওরা দারুণ ব্যালান্সড আর দুর্র্ধষ একটা জুটি তৈরি করেছে এবং আজ গোটা ভারত সানিয়ার জন্য গর্ব করছে। কিন্তু এই উচ্ছ্বাসের আড়ালে আপাতত চাপা পড়ে গেছে এই বিতর্ক যে গত কয়েক বছর ধরে সানিয়া মির্জাকে বারবার বলতে হয়েছে যে পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিয়ের পরও তিনি আপাদমস্তক ভারতীয়ই আছেন। তিনি যে এখনো ভারতীয় পাসপোর্টই রেখেছেন, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভারতীয় হিসেবে খেলেন, এমন কী কমনওয়ে়লথ গেমসেও ভারতের হয়েই পদত জিতেছেন সেগুলোর কোনোটাই যথেষ্ট হয়নি। নিজের রাজ্য তেলেঙ্গানার এক রাজনীতিক তাকে পাকিস্তানের বউ বলে কটাক্ষ করার পর টিভিতে সানিয়া যে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, সে ঘটনার পর এখনো বছর ঘোরেনি। সেদিন সানিয়াকে বলতে হয়েছিল, ‘এই যে আমাকে প্রতি পদে পদে নিজের ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে হয়, এটা ভীষণ আহত করে। কেন এটা আমি জানি না, সেটা আমি মেয়ে বলে না কি অন্য কোনো কারণে। কিন্তু এত বছর দেশের হয়ে খেলার পরও যে আমাকে এটা শুনতে হয়– এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক। সাবেক ক্রীড়াবিদ ও তারকা চুনী গোস্বামী অবশ্য মনে করেন, ভারতের বেশিরভাগ লোক এই প্রশ্নে সানিয়ার পাশেই আছে। তার ধারণা, একজন স্পোর্টসম্যান কাকে বিয়ে করল এটা কোনো ইস্যুই হতে পারে না। তার কথায়, ‘পাকিস্তানি একজন ক্রিকেটারকে বিয়ে করলেই রাতারাতি ও পাকিস্তানি হয়ে যাবে না কি? ও হায়দ্রাবাদের মেয়ে, এখানেই বড় হয়েছে, বিয়ের অনেক আগে থেকেই টেনিসে অনেক প্রতিশ্রুতি জাগিয়েছে– আর আজ সেটা পূর্ণতা পাচ্ছে।’ তবে উইম্ব^লডনসহ সাম্প্রতিককালে ডাবলসে সানিয়া মির্জার সাফল্যই যে ভারতে তার জনপ্রিয়তা আবার নতুন করে বাড়িয়ে তুলছে, সে ব্যাপারে বিশ্লেষকদের অবশ্য কোনো সন্দেহ নেই। সূত্র: বিবিসি বাংলা
You must be logged in to post a comment.