হুমায়ুন কবরি জুশান, উখয়িা :
কক্সবাজারের পান, সারা বিশ্বে মিষ্টি পান হিসেবে সমাদৃত।আর এই পান এখন পানির দামে বিক্রি হচ্ছে।ব্যবসায় মার খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা, ন্যায্যমূল্য না পেয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে পান চাষীদের।
কক্সবাজার উপজেলা উখিয়া উপজেলায় পানির দামেও পান বিক্রি করতে পারছে না কৃষকরা। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে উখিয়ার পান চাষী ও ব্যবসায়ীরা।শুধু তাই নয় বাজারে পান বিক্রি করতে এসে কেউ ক্রয় না করায় গাড়ী ভাড়াও জুটছে না অনেকের।
জানা যায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ সহস্রাধিক পানের বরজ রয়েছে।পান চাষের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। রুমখাঁ ক্লাসা পাড়া গ্রামের পান চাষী করিম উদ্দিন জানান, প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ১০ শতক জায়গার উপর পানের বরজ দেওয়া হয়। বর্তমানে পানের দাম এতই কম এক ঝুঁপড়ি বা একশ বিরা পান বাজারে বিক্রি করতে এনে ২শ টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ সপ্তাহিক মজুরী দাম এসেছে ৩ হাজার টাকা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, প্রতি রবিবার ও বুধবারে কোটবাজার, উখিয়া সদর, মনখালী, মরিচ্যা ও সোনার পাড়া বাজারে পানের হাট বসে। কোটবাজারের পান ব্যবসায়ী সিরাজ সওদাগর জানান, প্রতি হাটে অন্তত ১০ ট্রাক সমপরিমাণ পান বাজারে ক্রয়-বিক্রয় হয়।এখানকার ব্যবসায়ীরা উক্ত পান ঝুঁড়ি ভর্তি করে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম, হাঁটহাজারী, ঢাকা, দিনাজপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী, লাঙ্গলকোট, লাকসাম, মাইজদী, সোনাইমুড়ি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পান সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে বাজারে পানের দাম না থাকায় ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হলদিয়াপালংয়ের ঘাটিপাড়া গ্রামের পান চাষী ফকির আহমদ বলেন, গত রবিবার সাড়ে ৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ৫৫০ ভিরা পান ঝুঁপড়ি ভর্তি করে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে বহদ্দারহাটে নিয়ে মাত্র ১৮৩ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।পানের আড়ত্দার নুর হোসেন থেকে গাড়ি ভাড়া হওলাদ করে কোন রকম বাড়িতে আসছি।
ব্যবসায়ী বকতিয়ার আহমদ, জাফর আলম জানান, প্রতি বাজারেই পান ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার লোকসান গুণতে হয়। গত ৩ মাস ধরে পানের মূল্যের এই অবস্থা। তারা আরও বলেন, ভারত থেকে ফ্রি-ষ্টাইলে পান বাংলাদেশে ঢুকার কারণে পুরো মার্কেট ভারতীয় পানে সয়লাব হওয়াতে দেশীয় পানের বাজার মার খেতে বসেছে।
সচেতন মহলের মতে, সম্ভাবনাময় পান খাতে ন্যায্যমূল্য নিয়ে এই দুরাবস্থা দেখা দেওয়ায় উখিয়ার প্রায় ৫ হাজার পান চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, মহাজন থেকে দাদন নিয়ে পান চাষ করেছে চাষীরা। বাজারে পানের মূল্য না পাওয়ায় ওই টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছেনুয়ারা বেগম জানান, সম্ভাবনাময় পান শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবিলম্বে পানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে পান চাষী ও পান ব্যবসায়ীদেরকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টসহ কৃষিমন্ত্রীর নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
You must log in to post a comment.