নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া:
কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার ৩২ জন হজ্বযাত্রী হজ্বব্রত পালনের জন্য গত শুক্রবার রাতে সৌদিআরবের উদ্দেশ্যে বিমানে উঠার কথা ছিল। এজন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিদায়ও নেয় এসব হজ্বযাত্রী। কিন্তু ঢাকার ফকিরাপুলস্থ আলতাফ ট্যুরস এন্ড ট্যুরিজম নামক এজেন্সি মালিক ও প্রতিনিধির প্রতারণার খপ্পড়ে পড়ে হজ্বব্রত পালন করতে পারছেন না তাঁরা। প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এজেন্সি মালিক নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ায় হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে গত শুক্রবার বাংলাদেশ ছাড়তে পারেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সৌদিআরব যাওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেললেও এজেন্সি মালিকের প্রতারণায় এসব হজ্বযাত্রী পথে বসেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, ঢাকার ফকিরাপুলস্থ আলতাফ ট্যুরস এন্ড ট্যুরিজম নামক একটি ট্রাভেল এজেন্সি কক্সবাজারের চকরিয়ায় তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ দেয় পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের পালাকাটা গ্রামের মৌলানা আব্দুছ ছালাম নূরীকে। এজেন্সি প্রতিনিধি নূরী চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকার ৩২ জনকে হজ্বব্রত পালন করতে সরকারী ব্যবস্থাপনায় সৌদিআরব নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রথমদফায় ২ লক্ষ ৯০ হাজার করে প্রতিজনের কাছ থেকে আদায় করে। পরবর্তীতে নানা জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে আরো ২০ হাজার করে সর্বমোট ৯৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।
প্রতারণার শিকার হজ্বযাত্রী চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের পূর্ব কাকারা গ্রামের লিয়াকত আলী সওদাগরের পুত্র মিজানুর রহমান বলেন, বাবা হজ্বব্রত পালনে সৌদি আরব যাবেন। তাই সচরাচর নিয়মে আগে থেকে পরিবার সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিদায়ও নিয়েছেন। কিন্তু সৌদিআরবের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগ মুহূর্তে এবার বাবা হ্জব্রত পালন করতে যেতে পারছেন না এজেন্সি মালিক ও মোয়াল্লেমের প্রতারণায়। এ খবরটি আমরা যখন জেনেছি, তখন মনে হয়েছে, যেন আমাদের উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে, যে বিষয়টি এখন কারো কাছে বলতেও পারছিনা।
এজেন্সি মালিক ও প্রতিনিধির প্রতারণার শিকার চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক একেএম শাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে গত শুক্রবার আমাদের বিমানে উঠার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর আসে নির্দিষ্ট তারিখে আমরা হজ্বব্রত পালন করতে সৌদিআরব যেতে পারব না। এরপর এজেন্সির প্রতিনিধি মৌলানা আব্দুছ ছালামের কাছ থেকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারছেন না। এখন বলছেন, এজেন্সি মালিক গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তবে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
প্রতারণার শিকার সম্ভাব্য এই দুই হজ্বযাত্রী জানান, তাদের মতো চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩২ জন নারী-পুরুষ এবার হজ্বব্রত পালনে সৌদি আরব যেতে পারছেন না শুধুমাত্র এজেন্সি মালিক মুন্সিগঞ্জের আহসান উল্লাহ ও স্থানীয় মোয়াল্লেম মৌলানা আব্দুছ ছালাম নূরীর প্রতারণার কারণে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কাছে তারা দাবি জানান, প্রতারক এজেন্সি মালিক ও মোয়াল্লেমের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের।
প্রতারণার শিকার আরো কয়েকজন হজ্বযাত্রী বলেন, তাঁরা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কিন্তু এজেন্সির মালিক নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কোন হদিস মিলছেনা। এই অবস্থায় কিভাবে চকরিয়ার ৩২ জন নারী-পুরুষ তাদের বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করবেন তা নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন।
প্রতারণার শিকার হজ্ব যাত্রীদের মধ্যে আরো কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন চকরিয়া পৌরসভার নিজপানখালী গ্রামের শামসুল আলম মেম্বার ও তার স্ত্রী, অধ্যাপক রুহুল আমীন, ছাবের আহমদ সওদাগর ও তার স্ত্রী, মাস্টার মোজাফ্ফর আহমদ, কাকারা ইউনিয়নের পূর্ব কাকারা গ্রামের লিয়াকত আলী সওদাগর ও তার স্ত্রী।
এ ব্যাপারে ঢাকার ফকিরাপুলস্থ আলতাফ ট্যুরস এন্ড ট্যুরিজম নামক এজেন্সি মালিকের চকরিয়া প্রতিনিধি (মোয়াল্লেম) মৌলানা আব্দুছ ছালাম নূরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি এবং এজেন্সি অফিসেই রয়েছি। হজ্বব্রত পালনের জন্য চকরিয়ার যে ৩২ জন টাকা জমা দিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। তবে এজেন্সি মালিক অফিসে না এসে আত্মগোপনে থাকায় এখনো টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
You must be logged in to post a comment.