সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কক্সবাজারের দিনদিন বেদখল হচ্ছে সরকারী ভূমি : বাড়ছে সংঘাত

কক্সবাজারের দিনদিন বেদখল হচ্ছে সরকারী ভূমি : বাড়ছে সংঘাত

কক্সবাজারের দিনদিন বেদখল হচ্ছে সরকারী ভূমি : বাড়ছে সংঘাত

অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সভিউ:

কথায় আছে জোর যার মুল­ুক তার। জোর থাকলেই সবকিছু তার। ফলে এই ক্ষমতা ও লাঠিয়াল বাহিনীর জোরে কক্সবাজার দিনদিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে সরকারী ভূমি। সরকারী খাস জমি দখল প্রশাসন কর্তৃক না ঠেকানো। বনভূমি দখল বনবিভাগ কর্তৃক না ঠেকানোয়। ভূমিদস্যূ কর্তৃক সরকারী ভূমি দখল বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। গত একমাসে সরকারী ভূমি দখলের কারণে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। এভাবে সর্বত্র সরকারী বন ও খাস জমি দখল হতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে কক্সবাজার বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে। তাই দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।

জানা যায়, গত এক মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে সরকারী খাস ও বনভূমি দখল-বেদখলের কারণে প্রাণ হারান অনেকে। এরমধ্যে শহরতলির কলাতলি টিএন্ডটি টাওয়ার সংলগ্ন পাহাড়ে জমির দখল নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১জন নিহত ও ১০ নারী গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ স্ত্রীকে দেখতে অপর পক্ষের আক্রমনে নিহত হয় এক ব্যক্তি। এইভাবেই কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় ভূমি দখল, চিংড়ী ঘের দখল বেদখল নিয়ে সংঘাতে প্রাণহানীর মত ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় সুত্রে আরও জানায়, জেলার বিভিন্নস্থানে সরকারী খাস ও বনবিভাগের পাহাড়ি জমি অবৈধ দখল করে একাধিক বসতঘর তৈরি করে ভুমিদস্যুরা। আর এসব অবৈধ বসতঘরে বসবাস করার জন্য দেওয়া হয় মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদে। এতে করে তারা ওইসব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত করে ফলে কক্সবাজারের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হচ্ছে।

এদিকে শহরতলীর লিংক রোড এলাকায় সরকারী খাস জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে ভূমি খেকো দখলবাজ লেদা বাহিনী। দক্ষিণ মিঠাছড়ির ৯নং ওর্য়াডের সাদর পাড়ার দখলের উদ্দেশ্য ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় ভূমিদস্যু লেদা বাহিনীর প্রধান আজিজুল হক প্রকাশ লেদা আজিজ তার সশস্ত্র দলবল নিয়ে ওই সরকারী খাস জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এতে স্থানীয়রা সড়ক অবরোধসহ মানববন্ধন করে।

অন্যদিকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পূর্বপাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন হ্যাচারী, হোটেল, রেষ্টুরেন্ট ও বসতবাড়ির লোকজনই সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সমুদ্র সৈকতের সরকারি ভূমি দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। প্রথমে টেংরা দিয়ে ঘেরা, পরবর্তী রাতের অন্ধকারে লোকজন দিয়ে টিনসেট ঘর নির্মাণ করতে দেখা গেছে কলাতলী থেকে টেকনাফের মনখালী পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশের এই নিষিদ্ধ সৈকত ভূমিতে। যার ফলে একদিকে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সৃজিত ঝাউ বাগানগুলো কেটে ফেলার ফলে মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন অংশে বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙন ধরেছে। সরকারীভাবে নিষিদ্ধ ভূমিতে এইসব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা না নেয়া হলে অচিরেই মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশের পুরো জায়গাগুলো ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।

Pahar--4অপরদিকে বনবিভাগের জমি দখল করে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার দরিয়ানগরে নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। বনভূমিজুড়ে পাহাড় কেটে ক্যাম্পাসটির স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে। এতে করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি আড়াই’শ একর সরকারী বনভূমি হুমকির মুখে পড়বে বলে পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উর্ধ্বতনমহলে অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার বন বিভাগ।

বন বিভাগ জানিয়েছে, বনের ভেতর নির্মাণাধিন ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ের পাশাপাশি কাটা পড়বে প্রায় দেড় হাজার গাছ। ইতোমধ্যে স্থানীয় একটি সংজ্ঞবদ্ধ সিন্ডিকেট পাহাড় ও গাছ কেটে বনভুমি দখলের প্রতিযোগীতায় নেমেছে। সব মিলিয়ে ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ওই দাগের প্রায় আড়াই’শ একর বনভূমি হুমকির মুখে পড়েছে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ১ অক্টোবর চিঠি দিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: আলী কবির।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রইভ সড়কের দরিয়ানগর এলাকায় সড়ক থেকে আধা কিলোমিটার ভেতরে নির্মাণ করা হচ্ছে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। রাস্তা থেকে ক্যাম্পাসের জায়গা পর্যন্ত কয়েকটি সাইনবোর্ডও ঝুলানো হয়েছে। বনের ভেতর ক্যাম্পাসে যেতে ইতিমধ্যে রাস্তা নির্মাণে পাহাড়ও কাটা হয়েছে।

দেখা গেছে, কয়েকজন শ্রমিক সেমিপাকা একটি ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। এ এলাকায় ক্যাম্পাসটি পুরোপুরি বাস্তাবায়ন করতে কাটা পড়বে ২/৩ বছর মেয়াদী অন্তত দেড় হাজার গাছ। এর প্রভাব পড়বে আশ-পাশের বনেও। দখল-বেখল নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: আলী কবির জানান, জাতীয় বন নীতিমালা-১৯৯৪ অনুযায়ী বনায়ন ছাড়া অন্য কাজে বনভূমি ব্যবহার করা যায়না। এ জন্য সরকার প্রধানের অনুমতির প্রয়োজন। জাতীয় ভুমি ব্যবহার নীতিমালা-২০০১ এর ১৭ অনুচ্ছেদে ভুমি ব্যবহার নীতিমালার মুখ্য দিক সমুহ বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বনাঞ্চল বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত থাকবে এবং বর্তমানে ব্যবহৃত বনভূমির সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে মর্মে উলে­খ করা হয়েছে। সুতরাং গেজেটভুক্ত সরকারী বনভূমিতে স্থাপনা তৈরীর কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে কয়েক’শ একর খাস জমি পড়ে আছে। অনেক জমিতে রোঙ্গিরা বসতি স্থাপন দখল করে আছে। বনভূমিদখল না করে কর্তৃপক্ষ চাইলে ওসব জমিতে ক্যাম্পাস করতে পারে। এতে পরিবেশ রক্ষা পাবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/