কক্সবাজারের চিংড়ি জোন বহলতলী মৌজার মাউচ্ছাজোরা। চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা এটি। মাউচ্ছাজোরায় পাশাপাশি কয়েকটি মৎস্য প্রকল্পে গণডাকাতি হয়েছে বুধবার ভোররাতে। এসময় ডাকাতির আধিপত্য নিয়ে ডাকাতদলের দুই পক্ষ গোলাগুলিতে লিপ্ত হলে ডাকাত সদস্য ছাড়াও মৎস্য প্রকল্পের কর্মচারীসহ অন্তত ১০জন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত চারজন কর্মচারীকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ভোররাত ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা তিনঘন্টা লুটপাটের পাশাপাশি গোলাগুলি চলাকালে নিজের প্রকল্পে ডাকাত পড়েছে মনে করে দেখতে যাওয়ার সময় হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে অপর এক মৎস্য প্রকল্পের চাষী মোজাফ্ফর আহমদ (৬০)। তিনি সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নাপিতখালীর হাজী কবির আহমদের ছেলে।
ডাকাতের গুলিতে আহত প্রকল্প কর্মচারীরা হলেন- খুটাখালীর হাজী পাড়ার আবদুশ শুক্কুরের ছেলে মৎস্য চাষী আবদুর রহিম (৫০), নলবনিয়া এলাকার হাজী লেদু মিয়ার ছেলে শামশুল আলম (৪০), মৎস্যঘের কর্মচারী পূর্বপাড়া এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে ছৈয়দ আলম (৪০) ও নতুন পাড়া এলাকার আমির হামজার ছেলে মোক্তার আহমদ (৩৫)। আহত ডাকাতদের সহযোগীরা নিয়ে গেছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়।
আহত মৎস্যচাষী আবদুর রহিম বলেন, বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ৩০-৩৫ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল আমাদের মৎস্য ঘেরে হানা দিয়ে অতর্কিতভাবে গুলি করতে থাকে। এসময় আমাদের ঘেরে থাকা চারজন কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। ডাকাতরা রাত ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা তিন ঘন্টা ধরে স্লুইচ গেইটে জাল বসিয়ে অন্তত ২লক্ষ টাকার মাছ, মাছ ধরার জাল ও মোবাইল সেটসহ অন্তত আড়াই লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মারা যাওয়া মোজাফ্ফরের ভাই নুরুল আলম বলেন, আমার ভাই দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভোগছিলেন। রাতে মৎস্য প্রকল্পে ডাকাতি হচ্ছে শুনে দেখতে যায়। তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ভোরে অজ্ঞান অবস্থায় মোজাফ্ফরকে হাসাপাতালে নিয়ে আসে আত্মীয়রা। পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনি আগেই মারা গেছেন। তার শরীরে কোন গুলি বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে ময়নাতদন্তপূর্বক রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, মৎস্য প্রকল্প দখল নিয়ে দুই ডাকাতদলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছে। এসময় গুলির শব্দ শুনে মোজাফ্ফর আহমদ নামের এক মৎস্যচাষী হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে বলে শুনেছি। গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজনকে চকরিয়া সরকারী হাসপাতালে নিয়ে আসার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি আরো বলেন, সশস্ত্র গ্রুপের আরো সদস্য আহত হতে পারে। তবে তাদের নিয়ে গেছে সহযোগীরা।
বিভিন্ন হাসপাতাল কেন্দ্রীক অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে আহতদের খোঁজতে। ডাকাতদের ধরতে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
এদিকে বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন কক্সবাজার সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো: মাসুদ আলম।
You must be logged in to post a comment.