টেকনাফে মাঠে মাঠে লবণের স্তুপ : কৃষকের মাথায় হাত

ফাইল ফটো

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :

লবণের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় টেকনাফের লবণ চাষিরা পড়েছে বিপাকে! কারণ চাষিরা লবণ উৎপাদন করার সময় যে টাকা খরচ করেছে। লবণ বিক্রি করে সেই টাকাটাও আদায় করতে পারবেনা। কারণ উৎপাদন খরচের চেয়ে লবণের দাম অনেক কমে গেছে।

এদিকে লবণের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় ক্রেতার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, টেকনাফের বেশীর ভাগ লবণ চাষি ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করে লবণের চাষ করেছে। লবণের সঠিক মূল্য না পাওয়ার কারণে কিভাবে তারা ব্যাংকের ঋণ শোধ করবে সেই চিন্তায় তারা এখন চোঁখের পানি ফেলে লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছে।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে লবণের সঠিক মূল্য পাওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে গেছেন মাঠপর্যায়ের লবণ চাষিরা। কিন্তু সেই আশা পূরণ তো হয়নি বরং লবণের দাম আগের চেয়ে আরো অনেকটা কমে গেছে। লবণ চাষিদের অভিযোগ, প্রতিবছর একটি চক্র পাশ্ববর্তি দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে লবণ আমদানি করার জন্য দেশীয় লবণ শিল্পের বিরুদ্ধে করে যাচ্ছে ষড়যন্ত্র।

বিসিক সূত্র জানা যায়, বিগত ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে টেকনাফে লবণ উৎপাদন শুরু করে চাষিরা।

এই উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি থেকে লবণ উৎপাদন করা হয়। তবে গত বছর শুধু টেকনাফ উপজেলা ১ লাখ সাড়ে ১৪ হাজার টন লবণের চাহিদা পূরণ করেছে। এসময় সরকার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মণ লবণ উৎপাদিতও হয়েছে।

সরেজমিনে বেশ কয়েকটি লবনের মাঠ গুলো ঘুরে দেখা যায়, টেকনাফ নাফনদী সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও হ্নীলা ইউনিয়নে ২ হাজার একর জমিতেপড়ে আছে শত শত লবণের স্তুপ। প্রতিটি স্তুপে ৪০-৫০ মণ করে লবণ রয়েছে। এছাড়া টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং ও শামলাপুর ইউনিয়নে আরও দেড় হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছে। এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন করা প্রায় ৮শত মণ লবণ মাঠে ভিতরে গর্তে পড়ে আছে।

শুধু সাবরাং ইউনিয়নে লবণ মাঠ গুলোতে পড়ে আছে প্রায় ২৫০ হাজার টন লবণ।

এ ব্যাপারে সাবরাং ইউনিয়নের বিশিষ্ট লবণ ব্যবসায়ী মোঃ শরীফ হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, লবণ মজুদকারী মিল মালিকরা গত কয়েক বছর ধরে কৌশলে অসহায় ঋণগ্রস্ত লবণ চাষিদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এবং সিন্ডিকেট তৈরী করে লবণের দাম কমিয়ে দেয়। সেই সুত্র ধরে এবারও তারা মাঠপর্যায়ে চাষিদের কথা চিন্তা না করে আবারও হঠাৎ করে লবণের দাম কমে দিয়েছে।

এতে ঋণগ্রস্ত লবণ চাষিরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কারণ তারা লবণ উৎপাদন করতে খরচ করেছে সাড়ে ৬ টাকা। বিক্রি করতে গেলে পাবে সাড়ে ৩ টাকা, এক কথায় লবণ মূল্য পানির দামের চেয়ে কমে গেছে।

টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়া আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, অসাধু অর্থলোভী লবণ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কেউ ভাবছে না। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করে ঋনের টাকাও পরিশোধ করতে পারবে না অনেকে।

বিসিক টেকনাফের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে এই সীমান্তে প্রায় ৫০ হাজার মণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় লবণ উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, চাষিরা লবণের সঠিক মূল্য না পেলে আগামীতে লবণ উৎপাদন করা বন্ধ করে দেবে।