কক্সবাজার জেলার সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে মেলার নামে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ভূয়া রেজিষ্ট্রেশনের মোবাইল সীম। মেলার নামে কিছুদিন পর পর সিএনজি-টমটমে মাইকিং করে অবৈধ ও ভূয়া রেজিষ্ট্রেশনের এসব সীম বিক্রি হলেও দেখার কেউ নেই। ফলে রেজি:বিহীন এসব সীম মিয়ানমারে পাচারের পাশাপাশি ইয়াবা-মানবপাচার ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ রেজি:বিহীন সীম বিক্রি নিষিদ্ধ করে সরকার ইতোমধ্যে আইন জারী করেছে। কিন্তু মোবাইল কোম্পানী গুলোর অবৈধভাবে সীম বিক্রি করে মুনাফা লাভের মানসিকতা ও সে আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনে সঠিক রেজিষ্ট্রেশন বিহীন এসব সীম বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল। গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার পৌর শহরের প্রধান সড়কে কয়েকটি টমটমে মাইকিং করে রবি ও গ্রামীনের মোবাইল সীম বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসময় বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি সীমের দাম ৮০টাকা দুইটি কিনলে ১৫০ টাকা। সীমের জন্য আইডি কার্ড, ছবি লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করতেই জানালো এগুলো আগেই রেজি: করা আছে। কোন কাগজ পত্র লাগবে না। কে এসব সীম বিক্রি করতে দিয়েছেন জানতে চাইলে জানালো উপরের বাজারের আলমগীর নামে একজন ব্যবসায়ী এসব সীম বিক্রি করতে দিয়েছেন।
পৌর বাস স্টেশনের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েকদিন আগেও পৌরশহরে এভাবে সীম বিক্রি করতে দেখা গেছে এবং কয়েকদিন পরপর এভাবে সীম বিক্রি করতে দেখা যায়।
আর এসব সীমের অধিকাংশ ক্রেতা হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী, মানব পাচারকারী, অপরাধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। শুধুমাত্র রবি’র সীম গুলোই এভাবে প্রকাশ্যে মাইকিং করে বিক্রি করতে দেখা যায়। অন্যান্য কোম্পানীর ভূয়া রেজিষ্ট্রেশনের সীম বিভিন্ন দোকানে বিক্রির অভিযোগ থাকলেও প্রকাশ্যে মেলার নামে বিক্রি করতে দেখা যায় না।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব রেজি: বিহীন সীম বিক্রির পেছনে খোদ কোম্পানীর কর্মকর্তারাই জড়িত। কোম্পানীর কর্মকর্তারা কোন একজন ব্যবসায়ীকে দিয়ে এসব সীম বিক্রি করান এমন অভিযোগ বৈধভাবে মোবাইল সীম বিক্রেতা ব্যবসায়ীদের। এভাবে পথেঘাটে ভূয়া রেজিষ্ট্রেশনের সীম বিক্রি করার ফলে বৈধভাবে রেজিষ্ট্রেশন করে সীম ক্রয় করতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করে না বলে জানায় এসব ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে কোম্পানী জড়িত না থাকলে ভূয়া আইডি কার্ড দিয়ে এসব সীম পূর্বেই রেজি: করে চালু করা হলো কিভাবে। পৌর এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মোবাইল সীম বিক্রেতা ব্যবসায়ী জানান, রবিসহ বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সীম কেনার সময় বিভিন্ন ব্যক্তির দেওয়া আইডি কার্ড ছবি যা পরবর্তীতে কোম্পানীর কাছে জমা দেওয়া হয় সেইসব আইডি কার্ড ও ছবির কপি পুনরায় ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে সরবরাহকৃত সেইসব আইডি ও ছবি দিয়ে সীম রেজি: করে চালু করা হয় পরে তা মেলা অথবা দোকানে বিক্রি করা হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) টেকনাফ উপজেলা সাধারন সম্পাদক এবিএম আবুল হোসেন রাজুর মতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে একজনের নামের আইডি ছবি দিয়ে রেজি:কৃত সীম চলে যাচ্ছে অন্যের কাছে। এভাবে মোবাইল কোম্পানী গুলো পরোক্ষভাবে তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য সারাদেশে অপরাধ সংঘঠনে সহযোগীতা করে যাচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন তিনি। এব্যাপারে রবি’র টেকনাফ এরিয়া ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এভাবে সীম বিক্রির পেছনে রবি’র কোন হাত নেই। কোম্পানী থেকে অনুমোদিত এজেন্টদের সীম সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তারা নিজেরা এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সীম গুলো রেজি: করে পরে তা বাজারে মেলার নামে বিক্রি করে থাকে বলে তিনি স্বীকার করেন। এব্যাপারে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আতাউর রহমান খোন্দকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, মেলা হউক আর যেভাবে হউক যার কাছে সীম বিক্রি করা হবে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে রেজিষ্ট্রেশনের পর সীম বিক্রি করা যাবে। যদি কেউ ভূয়া আইডি কার্ড দিয়ে রেজি: করে সীম বিক্রি করে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
You must be logged in to post a comment.