গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ :
বাংলাদেশের সর্ব-দক্ষিণে সীমান্ত শহর টেকনাফ এ এলাকাটি সীমান্ত বাণিজ্য শহর হিসাবে পরিচিত। সরকার প্রতিবছর এ সীমান্ত এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে।
উল্ল্খ্যে সরকার এই এলাকা থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে আজ থেকে বিশ বছর আগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য (বর্ডার-ট্রেড) চালু করা হয়। এরপর ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সীমান্ত বাণিজ্যে চালু হয়। কিন্ত এরপর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের বিভিন্ন পণ্য প্রচুর পরিমাণ আমদানী হয়ে আসছে। অথচ দেশীয় পণ্য রপ্তানী একেবারেই সীমিত। এতে রাজস্ব ঘাতটি দেখা দিয়েছে। বিগত বিশ বছরে ৩হাজার ১শ ৩৪ কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। মিয়ানমার পণ্য আমদানী বৃদ্ধি পেলেও দেশীয় পণ্য রপ্তানী কম হওয়ায় এ ঘাটতির মূল কারণ বলে জানা যায়।
সীমান্ত বাণিজ্যের আজ বিশ বছর দুই মাস অতিক্রম করেছে। এ সীমান্ত বাণিজ্য আরো গতিশীল করতে বিভিন্ন সময়ে দু’দেশের মধ্যে বৈঠক হলেও রপ্তানী ক্ষেত্রে কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। দেশীয় পণ্য রপ্তানী বেশী হওয়ার জন্য উচ্চ পর্যায়ে ব্যবস্থা জরুরী বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সীমান্ত বাণিজ্য চালু হওয়ার পর প্রথম প্রথম দুদেশের আমদানী-রপ্তানী কাছাকাছি থাকলেও পরবর্তীতে আমদানী বৃদ্ধি পায় এবং রপ্তানী কমে যায়। ফলে বাণিজ্যের মধ্যে ঘাটতি বাড়তে থাকে। তবে বৈধ বাণিজ্যের পাশাপাশি চোরাচালান ও মাদক ইয়াবা পাচার বৃদ্ধি হওয়ায় মিয়ানমারে দেশীয় রপ্তানী দিন দিন কমে যাচেছ। গতঅর্থবছরে সীমান্তরক্ষী বিজিবি ১৩৪ কোটি টাকার মাদক ও চোরাই পণ্য উদ্ধার করলেও চোরাচালান বন্ধ নেই। তাছাড়া কতিপয় চিহ্নিত হুন্ডি ব্যবসায়ী মিয়ানমারে সাথে অবৈধ টাকা পাচার করে যাচেছ। এরা ঢাকা, চট্টগ্রাম অবস্থান নিয়ে টেকনাফে এজেন্টের মাধ্যমে হুন্ডির টাকা সংগ্রহ করে বিভিন্ন নেটওর্য়াকে পাচার অব্যাহত রেখেছে। যদি হুন্ডির টাকা পাচার না হয় তাহলে দেশীয় পণ্য রপ্তানী বেড়ে যেত। তবে পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ জরুরী হয়ে পড়েছে।
এদিকে কারা প্রকৃত হুন্ডি ও চোরাকারবারী তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিযে আহবান জানান এলাকার সচেতনমহল।
শুল্ক ষ্টেশন সূত্রের তথ্য অনুয়ায়ী, সীমান্ত বাণিজ্য বিশ বছর দুই মাসে ৩হাজার ১শ ৩৪ কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই ও সেপ্টম্বর মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাড়ায় ৩৮ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি দাড়ায় ২৪৫ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। এভাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঘাটতি দাড়ায় ৩২৮ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। ১৯৯৫-৯৬ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত ২৬২৮ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ঘাটতি ছিল।
তবে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ১৪৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকার দেশীয় পণ্য রপ্তাণী করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারে রপ্তানী বৃদ্ধি পেলে এ ব্যবসায় ইতিবাচক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রপ্তানী বাণিজ্যে নিত্য নতুন পণ্য যুক্ত করতে হবে। এজন্য মিয়ানমারে দেশীয় পণ্যের বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
পণ্য রপ্তানীর বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, সীমান্ত বাণিজ্যে নানা সমস্যার কারনে সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবসায় প্রভাব পড়ছে। দেশীয় পণ্য রপ্তানী বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে রপ্তানী অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিয়ানমারে দেশীয় পণ্যের বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নিলে রপ্তানী আরো বৃদ্ধি পাবে। সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবসায় ঘাটতি কমিয়ে আনতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
You must be logged in to post a comment.