প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে নতুন করে আশার পারদ উঁচুতে উঠেছিল। কিন্তু সফরের একদিন আগেই ভারতের পক্ষ থেকে অানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, এ সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। ৮ এপ্রিল শনিবার দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও মোদির শীর্ষ বৈঠকেও তিস্তা প্রসঙ্গ আসে। দুই নেতার বৈঠকের এক পর্যায়ে নরেন্দ্র মোদি কলকাতার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ডেকেও নেন। শীর্ষ এ বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি নিজ থেকেই তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের মানুষকে আশ্বস্ত করেন, মোদি ও শেখ হাসিনার আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে।
দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি নিয়ে বিভেদ কেন, নিচের দশটি পয়েন্টে তুলে ধরা হলো-
১. তিস্তা নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতের সিকিম থেকে, যেটি পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে এসে যমুনায় মিশেছে। ভারত এ নদীটির ৫৫ শতাংশ পানি দাবি করেছে।
২. বাংলাদেশ এখন যে পরিমাণ পানি পায়, তার চেয়ে বেশি দাবি করেছে। এখনও ভারতের চেয়ে অনেক কম পানি পায় বাংলাদেশ।
৩. ১৯৮৩ সালে তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম একটি সমঝোতা হয়। ২০১১ সালে দুই দেশের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষীত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। ১৫ বছর মেয়াদি সে চুক্তিটি হলে বাংলাদেশ পেত তিস্তার ৩৭.৫ শতাংশ পানি এবং ভারত পেতো ৪২.৫ শতাংশ পানি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তির মুখে সেই চক্তি ঝুলে যায়। ২০১১ সালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে মমতারও আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত না আসায় আর চুক্তিটি হয়নি।
৪. প্রতিবছর মে এবং ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ তিস্তার ৫০ শতাংশ পানি চায়। কারণ এ সময়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। ফলে কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। ঐতিহাসিকভাবে এ সময়ে তিস্তায় (বাংলাদেশের রংপুর অংশে) ৫০০০ কিউসেক পানি থাকার কথা থাকলেও আসলে ৫০০ কিউসেক পানিও থাকে না।
৫. তিস্তার পানি সঙ্কট নিয়ে ভারত এখন নিজেরাই সঙ্কটে পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি। তিন বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন, আমাদের কৃষির জন্য যে পরিমাণ পানি দরকার, তিস্তায় সেটিও নেই। আমাদের কৃষিকে গতি দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অারও বেশি কৃষিকাজ করা দরকার। দেড় লাখ একর জমিতে কৃষিকাজ করার সে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নির্ধারণ করেছে, তা পূরণ করতে হবে।
৬. সেচ ও মাছ ধরার জন্য তিস্তা নদী হচ্ছে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম যৌথ নদী। বাংলাদেশের প্রায় ২৭৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা তিস্তার প্লাবনভূমি। তিস্তার পানির উৎসগুলোর মধ্যে ৮৩ ভাগের অবস্থানই ভারতে, অবশিষ্ট ১৭ ভাগ বাংলাদেশে।
৭. তিস্তা থেকে যদি ভারত পানি তুলে নেয়, তাহলে বাংলাদেশের পাঁচ জেলায় অন্তত এক লাখ হেক্টর জমি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ পাঁচটি জেলাই শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ খরার মধ্যে পড়ে।
৮. আগেও বিভিন্ন সময় নিজের অবস্থানের সপক্ষে বলতে গিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিস্তা থেকে যে পরিমাণ পানি বাংলাদেশের পাওয়ার কথা, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই তা পাচ্ছে। ২০১৩ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘কলকাতা বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও কৃষকের সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকার পর রাজ্যের স্বার্থের বাইরে গিয়ে হলেও তিস্তা থেকে বাকীটা ছেড়ে দেওয়া হবে।’
৯. তিস্তাকে কেন্দ্র করে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বিতর্কের অন্যতম কারণ। এখন পর্যন্ত তিস্তার পানির ওপর ভরসা করে ভারত অন্তত ২৬টি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে, যাদের বেশরভাগই সিকিমে (উচ্চ অববাহিকায়)। ভারত সরকার এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাইছে।
১০. মমতা বন্দোপাধ্যায় ৮ এপ্রিল রোববার ভারত সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিস্তায় পানি নেই দাবি করে তিস্তার বদলে একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। মমতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, উত্তরবঙ্গে তোর্সা, জলঢাকাসহ চারটি নদীতে পানি আছে। ফলে তিস্তার বিকল্প হিসেবে এই চারটি নদীর পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূত্র:priyo.com,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.