নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি :
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নের চাকঢালায় কিশোরী মেয়েকে লম্পট পিতা কর্তৃক ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। শনিবার এ ঘটনায় ধর্ষিতা মেয়ে উম্মে হাবিবা বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত সুপারের বিরুদ্ধে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন সচেতন মহল।
ধর্ষিতার লিখিত অভিযোগে জানা যায়- ‘চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু বক্কর ছিদ্দিক এর সাথে ১৯৯৯ সনে তার মায়ের বিবাহ হয়। তাদের পরিবারে এক মেয়ে ও দুই ছেলে আছে। বড় মেয়ে উম্মে হাবিবা (১৫)। বিগত ২০০৩ সনে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে পরবর্তীতে আবু বক্কর ছিদ্দিক তার বড় মেয়ে উম্মে হাবিবাকে চাকঢালা এলাকায় নিয়ে আসে।
গত রমজানের দুই দিন পূর্বে সত্ মায়ের অনুপস্থিতিতে উম্মে হাবিবাকে তার পাষণ্ড পিতা জোর করে ধর্ষণ করে। কিছুদিন পর পুনরায় তার পিতা ধর্ষণ করলে সে তার মায়ের কাছে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে তার পিতা শপথ করে আর কখনো জঘন্য এধরনের কাজ করবে না মর্মে অঙ্গিকার করে। ভয়ে সে ধর্ষণের কথা কাউকে জানায়নি। কিন্তু ৮ আগস্ট গভীর রাতে মৌলানা আবু বক্কর তার মেয়েকে জোর করে আবারো ধর্ষণের চেষ্টা করলে পরের দিন মেয়ে উম্মে হাবিবা তার খালার বাড়িতে চলে যায় এবং ঘটনার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। একাধিক বিয়ে করেও কান্ত হতে না পেরে সর্বশেষ নিজ মেয়ের উপর কু-নজর পড়ে। পিতার লম্পট স্বভাব থেকে রেহাইও পায়নি ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে উম্মে হাবিবা। মানুষরুপী পাষণ্ড পিতা নিজ মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন।
এজেহার দাখিলের পর উম্মে হাবিবাকে পুলিশী হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় বিদারক প্রথম ঘটনাটি ঘটে, গেল রমজান মাসের দুই দিন পূর্বে তার পিতার বাড়িতে। কিন্তু তখন পিতার কাছে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি কাউকে জানায়নি মেয়েটি। এভাবে রমজান মাসেও একই ঘটনা ঘটে।
অবশেষে ৮ আগস্ট বাধ্য হয়ে মেয়ে উম্মে হাবিবা তার লম্পট পিতার বাড়ি থেকে খালার বাড়িতে চলে যাওয়ার পর ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয় এবং ১৫ আগস্ট ভিকটিম উম্মে হাবিবা নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হাজির হয়ে তার লম্পট পিতার বিরুদ্ধে মামলা করতে এজাহার নামীয় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর উম্মে হাবিবাকে পুলিশী হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবুল খায়ের জানান- বাদীর অভিযোগের পর যাচাই বাছাই করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। যার নং- ০৭-(১৬/০৮/২০১৫ইং)। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে তিনি জানান।
এদিকে মর্মষ্পষী এ ধরনের ঘটনার পরও একটি মহল অভিযুক্ত মৌলানা আবু বক্করকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ধর্ষিতা মেয়ের মা আয়েশা বেগম।
এদিকে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে ঘটনাটি চাউর হয়েছে উপজেলার সর্বত্র। ছোট-বড় সবার মধ্যে এই মর্মস্পশী ঘটনার আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ঘটনার পর থেকে ধর্ষিতার পিতা মৌলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক পলাতক রয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সমাজের সচেতন মহলকেও ভাবিয়ে তুলেছে বর্বরোচিত এই ঘটনা।
মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপার মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দীক পলাতক থাকায় তার মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ বলেন,মানুষরুপী এমন সমাজের আগাছাগুলি যত তাড়াতাড়ি কেটেঁ ফেলা হবে, তত ভালো। আমি এই কুলাঙ্গারের ফাঁসি দাবী করছি এবং এলাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ আপনারা এই নর পশু আবু বকরকে হাতে নাতে ধরে অক্ষত অবস্থায় পুলিশের কাছে সোর্পদ করুন।
You must be logged in to post a comment.