অবশেষে শাহপরীরদ্বপের তিন বছর আগে ক্ষতিগ্রস্ত ভাঙ্গা বেড়িবাধঁ নির্মাণ করতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১০৬ কোটি টাকার বাজেট হাতে নিয়েছে। ২৮ আগস্ট কক্সবাজার বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা কক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রী বারিস্টার আনিসুল হক মাহমুদ ঘোষণা দিয়েছেন। এখবরটি টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের ৪০হাজার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মাঝে স্বস্তির নিশ্বাস ফিরে আসে।
উল্লেখ্য গত ২০১২ সালের ২২ জুলাই সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে বেড়ীবাঁধ বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে গত তিন বছর ধরে শাহপরীরদ্বীপবাসীর কপালে দুঃখ নেমে আসে। এতে দিনের পর দিন তাদের কষ্টের শেষ নেই। সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া বেড়িবাঁধের কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেলেও কোন উদ্যোগ না নিলে আস্তে আস্তে জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে। ফলে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাটসহ দ্বীপের বিস্তীর্ণ জনপদ ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়। ফলে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৪০ হাজার জনগোষ্টীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তবে সমুদ্র ও নদীর পানিতে ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ীতে গড়ালেও হতভাগা মানুষের আক্ষেপ ছিল কবে দ্বীপে বেড়িবাঁধ হবে? ভাঙন আর প্লাবনের সাথে যুদ্ধ করে চরম ভোগান্তিতে বসবাস রয়েছে বিচ্ছিন্ন এ জনপদের বাসিন্দাদের। তবে শাহপরীরদ্বীপ সমুদ্রে বিলীনের আশংকায় অনেকে পাড়ি জমিয়েছে অন্যত্র। অবশেষে মন্ত্রীর আশ্বাসে তাদের সেই প্রচেষ্টা আশার আলো দেখা মিলছে।
২৮ আগস্ট পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কক্সবাজার বিমান বন্দরে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবন্দসহ সাংবাদিকরা শাহপরীরদ্বীপ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, কক্সবাজারের জন্য ৫০০ কোটি টাকার ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য গৃহিত ২৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেকে) পাশের অপেক্ষায়।
এছাড়াও কক্সবাজার বাঁকখালী নদীর জন্য ১৫০ কোটি টাকা এবং টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের জন্য ১০৬ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই একনেকের সভায় প্রকল্প সমূহ উত্থাপন করা হবে এবং দ্রুত এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
এদিকে খবরটি শাহপরীরদ্বীপে ছড়িয়ে পড়লে দ্বীপবাসীর মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার দেখা দিয়েছে। তবে শীঘ্রই স্থায়ী বেড়ীবাঁধ প্রকল্প অনোমদন দিয়ে দূর্ভোগ ও আতংক থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন দ্বীপবাসী।
এদিকে গত তিন বছর ধরে সাগরের রাহু গ্রাসে টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ। বর্তমানে মূল-ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে লোকজনকে ঝুকি নিয়ে নৌকায় পারাপার করতে হচেছ। সাগরের জোয়ারের তোড়ে গত কয়েক বছরে দ্বীপের শত শত বাড়ী-ঘর বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গা বাধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ সড়ক ভেঙ্গে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। বর্ষায় সাগর পাড়ের মানুষের মাঝে আতংক লেগে আসে। এমনিতে দ্বীপের দক্ষিন-পশ্চিমের ৩ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। তবে টেকসই ও পরিকল্পিত বাঁধ না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা সাবরাং ইউনিয়নে সর্ব দক্ষিনে শাহ্পরীরদ্বীপের অবস্থান। এখানে ১৩টি গ্রাম রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস। এ দ্বীপের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে সীমান্ত ঘেষা নাফনদী, দক্ষিণে মোহনা বদর মোকাম। তবে অধিকাংশ এলাকা বেড়িবাধ দিয়ে রক্ষা করা। এ বাঁধ অরক্ষিত হয়ে সাগরের পানি লোকালয় গ্রাস করছে। ফলে বসত বাড়ী, চিংড়ী ঘের, ফসলী জমি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ অবস্থায় পুরোদ্বীপ সাগরে বিলীনের আশংকা রয়েছে।
সাবরাং ইউানয়ন পরিষদের চেয়াম্যান হামিদুর রহমান জানান, শাহপরীরদ্বীপের তিন বছর আগের ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়া বেড়িবাধটি দীর্ঘদিন পর হলেও পূর্ণ নির্মাণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রী ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন তা অতিসত্তর বাস্তবায়র করে আমার শাহপরীরদ্বীপবাসীকে চরম দূর্ভোগ থেকে বাচাঁনোর জন্য আহবান জানাচ্ছি।
You must log in to post a comment.