এম.আবদুল্লাহ আনসারী, পেকুয়া :
কক্সবাজার জেলা উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় বিকাশ এজেন্টের ১লক্ষ ৯হাজার ৪শত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্কুল শিক্ষিকাসহ দু’বোন। প্রতারণার মাধ্যমে পেকুয়ায় বার বার অভিনব কায়দায় টাকা হাতিয়ে নিতে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র তৎপর হওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, ৩১আগস্ট সোমবার পেকুয়ায় বিকাশ এজেন্ট থেকে ১লক্ষ ৯হাজার ৪শত টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত আপন দু’বোন। ওই দিন সকাল ১১টার দিকে পেকুয়া কবির আহমদ চৌং (পেকুয়া বাজারস্থ) মা টেলিকম নামক দোকান থেকে ওই টাকা অপর প্রান্তে মুঠোফোনে বিকাশের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। পরে নগদ পরিশোধের সময় টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে দোকানদার ও স্থানীয়রা ওই আপন দু’বোনকে হাতে নাতে ধরে আটক করে।
জানা গেছে তারা দু’জনই বিবাহিতা। এদের মধ্যে আশরাফা বেগম (৩৮) উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মরত প্রধান শিক্ষিকা। তার শাশুর বাড়ি টেকনাফের শাপলাপুর ইউনিয়নে। স্বামী আব্দুল্লাহ সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। অপর বোন রোকেয়া বেগম (৩২) এর শ্বাশুর বাড়ি চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়নে। তার স্বামী দেলোয়ার হোসেনও সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। এরা সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গোঁয়াখালী এলাকার মৃত নুর উদ্দিনের মেয়ে বলে জানা গেছে।
এদিকে আপন দু’বোনের এমন দুর্দান্ত প্রতারণার ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই দিন টাকা দিতে না পারায় তারা ওই দোকানদারকে টাকা পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় সীমা বেধে দিয়ে একটি নন-জুডিশিয়াল লিখিত ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তিনামা সম্পাদন করেন ওই ব্যবসায়ীর সাথে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ওই দিন তারা দু’বোন পেকুয়া বাজারের মা টেলিকমে গিয়ে প্রথমে অপর প্রান্তের ০১৭৯১-৪৮১৪১৫ নাম্বারে ৫হাজার ১শত টাকা বিকাশ করে। ওই টাকা তারা পরিশোধ করেন ব্যবসায়ীকে। এর কিছুক্ষণ পর ফের ওই দোকানে এসে অপর ০১৯১০-১৬৫১৮২ ও ০১৭৯৯-৭৩৯০২৯ পৃথক নাম্বারে ২০হাজার ও ২৫হাজারসহ ৪৫হাজার টাকা বিকাশ করেন। দোকানদার ওই টাকার পেমেন্ট চাইলে তারা দু’বোন টাকা এক সাথে পেমেন্ট দেয়ার কথা বলে আরো অপর ০১৬২৫-৭২২০০৯ নাম্বারে ২৫হাজার, ০১৮৪৮-০৫৪৩০৫ নাম্বারে ১৪হাজার ও অপর ০১৭৯১-৪৮১৪১৪ এ তিনটি নাম্বারে মোট ১লক্ষ ৯হাজার ৪শত টাকা বিকাশ করেন। এ সময় সমুদয় প্রদত্ত প্রেরিত বিকাশ এজেন্টের দেয়া ক্যাশ পেমেন্ট চাইলে বিপাকে পড়েন ওই দু’বোন। তারা কৌশলে সটকে পড়ার চেষ্টা করলে দোকানদার স্থানীয়দের সহায়তায় তাদেরকে আটক করে। পরে মিমাংসার স্বার্থে চুক্তিনামার মাধ্যমে দু’মহিলার নিকট আত্মীয়রা তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়।
মা টেলিকমের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান তারা আমার প্রতিবেশি। তারা এমন কাজ করবে আমার ধারনা ছিলনা। কথা মতে টাকা বিকাশ দিয়ে দিয়েছি। পরে কৌশলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা আটক করে। এখন বাড়িতে গিয়ে ওই চুক্তিনামা নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলতে শুনা যাচ্ছে। টাকা পরিশোধ না করতে নতুন ফন্দি খোঁজছে তারা।
জড়িত প্রধান শিক্ষিকা আশরাফা বেগম জানিয়েছেন আমার বোন রোকেয়া আমাকে জানিয়েছেন তার মোবাইলে প্রধানমন্ত্রী ২লক্ষ ২০হাজার টাকা দিয়েছেন মর্মে অপর একটি রবি নাম্বার থেকে ম্যাসেস দেন। এমনকি রবি কোম্পানিও তার নাম্বারে ৫০হাজার টাকা জমা করেছেন। এ টাকা উত্তোলনের জন্য ১লক্ষ ১৫হাজার টাকা প্রয়োজন। তাই উক্ত টাকা তার কথা মতে ওই দোকান থেকে বিকাশে দিয়েছে সে। আমি প্রথমে ছিলাম না। বিদ্যালয় থেকে আমাকে ডেকে আনা হয়েছে।
পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী মোঃ মিনহাজ উদ্দিন এর সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন আত্মসাৎকৃত টাকা পরিশোধ করতে ওই দু’মহিলার কাছ থেকে লিখিত চুক্তিনামা নিয়েছেন ব্যবসায়ী। এমনকি সমান ভাবে ওই টাকা পরিশোধ করতে দু’বোন একজন আরেকজনের কাছ থেকেও লিখিত কাগজ নিয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুর রশিদ খান বলেন একজন শিক্ষিকার ধরনের কান্ড খুব দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনায় চাকুরি থাকার কথা নয়। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
You must be logged in to post a comment.