
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; বান্দরবান :
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে কাঁদাপানিতে ছেয়ে আছে এলাকাগুলো। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।
জেলার লামা উপজেলায় ৪ দিনের স্থানী ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ -কালভার্ট গুলো ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। উপজেলাটিতে বন্যা, পাহাড় ধস ও জলাবদ্ধতার কারণে কমপক্ষে ৫ হাজারের অধিক বসতবাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানগণ। লামা সরকারি হাসপাতালে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও ঔষধ নষ্ট হয়েছে। এদিকে লামা খাদ্য গুদামে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও গম ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে, থানচি সড়কের পোড়া বাংলা এলাকায় সড়কের একটি বড় অংশ ধসে গিয়েছে। এছাড়া রুমা সড়কের দলিয়ানপাড়া এলাকায় সড়ক ধসে গিয়েছে। ফলে উপজেলা দুটির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে। এছাড়া জেলা শহরের মধ্যমপাড়া, উজানীপাড়াসহ বিভিন্ন নিচু এলাকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। মারমা বাজার এলাকা থেকে অনেককেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে শতাধিক ঘরবাড়ি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলা শহরের বাইরে থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ পানি বিশুদ্ধকরণ দুটি মেশিন নিয়ে এসে বিভিন্ন জায়গায় পানি সরবরাহ করছে।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় বান্দরবানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বন্যার পানিতে ৮২৪৩ হেক্টর জমির ফসল ও ১৫ হাজার ৬০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার পরিবারের ৬২ হাজার লোক পানিবন্দী ছিল। সড়ক জনপদ বিভাগের ১০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ও পাহাড়ধসে মারা গিয়েছে দশজন।
জেলা প্রশাসক জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৫৩ হাজার ৮০০ লিটার বিশুদ্ধ পানি, ৮৫০০ পরিবারকে খাবার ও ৯৬২ জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। সরকারের ত্রাণবিভাগ থেকে ১৬৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও ছয় লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকেও ইউনিয়নগুলোতে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
You must be logged in to post a comment.