নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া :
কক্সবাজার জেলার উখিয়ার বহুল আলোচিত পালংখালী ওয়াকফ্ এ্যাস্টেট পরিচালনায় মতোয়াল্লীর ব্যর্থতা ও অদক্ষতার কারণে এ্যাস্টেটের যাবতীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। মতোয়াল্লী ও চাষীদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে চলতি মৌসুমে প্রায় ৯২৭ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে এলাকার হাজারেরও অধিক ভূমিহীন কৃষক হতাশা ও চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কৃষকদের দাবী, এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে আসছে মৌসুমে রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।
সরেজমিন পালংখালী ওয়াকফ্ এ্যাস্টেট ঘুরে স্থানীয় চিংড়ি চাষী ও ভূমিহীন কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় ভূমিহীন হাজারেরও অধিক কৃষক ওয়াকফ এ্যাস্টেটের মালিকানাধীন ৯২৭ একর জমি আগাম টাকায় লাগিয়ত নিয়ে শুষ্ক মৌসুমে চিংড়ি চাষ ও বর্ষা মৌসুমে আমন চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
ইতোমধ্যে মতোয়াল্লী পরিবর্তন হয়ে সোহেল মোস্তফা চৌধুরী এ্যাস্টেটের দায়িত্বভার নিলে ৭০ জন চিংড়ি চাষী প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা এ্যাস্টেটের নিকট পাওনা থাকে। কৃষকেরা ওই টাকা দাবী করলে মতোয়াল্লী টাকা পরিশোধ না করে বার বার কালক্ষেপণ করতে থাকে। এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ভূমিহীন কৃষক মোহাম্মদ সোলতান, আবুল হোছন বাবু, আবুল কালাম, আবরার হোসেন ও লুৎফুর রহমান অভিযোগ করে জানান, কৃষকদের পাওনা টাকা আদায়ের ব্যাপারে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনের নেতৃত্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কৃষকদের পাওনা ৮০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে সোহেল মোস্তফা চৌধুরী আশ্বস্থ করলেও তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি ও এ্যাস্টেটের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করায় পাওনাদার কৃষকেরা উক্ত বিতর্কিত জমিতে আমন চাষাবাদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
এ্যাস্টেটের ম্যানেজার আলী মনজুর জানান, এ্যাস্টেটের মতোয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরীর অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে এ্যাস্টেটের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিচালিত মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা ও নুরানী মাদরাসা সহ এ্যাস্টেটে কর্মরত প্রায় শতাধিক কর্মচারী বেতন ভাতা বাবদ ১৫ লক্ষ টাকা ধার দেনা করে পরিশোধ করা হয়েছে। ওই টাকা মতোয়াল্লীর কাছে চাইতে গেলে হুমকি, ধমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। দীর্ঘদিনের এ্যাস্টেট পরিচালনাকারী এ ম্যানেজার আরো জানায়, মতোয়াল্লীর বিচ্ছিন্ন মনোভাবের কারণে বর্তমানে ৯২৭ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের দাবী, চলতি মৌসুমে তারা আমন চাষাবাদ করতে ব্যর্থ হলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে মানবেতর দিনযাপন করতে হবে। এ ব্যাপারে পাওনাদার কৃষকেরা উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতার শরণাপন্ন হলে তিনি বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করার আশ্বস্থ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর সাথে আলাপ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মতোয়াল্লী ও পাওনাদার কৃষকের উপস্থিতিতে চিংড়ি চাষীদের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশে যদি চাষীদের পাওনা টাকা ফেরত দেওয়া না হয় তাহলে বিকল্প পন্থায় টাকা উদ্ধার করে হলেও ওইসব জমিতে আমন ও চিংড়ি উৎপাদন নিশ্চিত করা হবে।
এ ব্যাপারে ওয়াকফ এ্যাস্টেটের মতোয়াল্লী সোহেল মোস্তফা চৌধুরীর ০১৬৭৩০৯৩৫৫৯ মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার পরও তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
You must be logged in to post a comment.