রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাত্ করে আলোচনায় এসেছে মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গ। ২৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেন। এরপর আওয়ামী লীগ ও সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। এতে মধ্যবর্তী নির্বাচন আবারও আলোচনায় ওঠে আসে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।
তবে কী নির্বাচন আসন্ন? এ প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘নির্বাচনের বাস্তব কোনো পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি না’।
তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বেই সাধারণত দুই ধরনের পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়ে থাকে। এক সরকার অভ্যন্তরীণভাবে চাপ অনুভব করলে বিরোধী দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় না দিয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেয় অথবা বিরোধী দলের প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে নির্বাচন দিয়ে থাকে।’ বাংলাদেশে এখন সে অবস্থার কোনোটিই নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে এ আলোচনার কোনো তাত্পর্য তিনি দেখতে পাচ্ছি না।’ কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, কোনো পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসায় পাল্টাপাল্টি এ বক্তব্যের কোনো তাত্পর্য নেই।
একইদিন নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র আসাদজ্জামান রিপন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করার পর রাতে মুখ খোলেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
২৫ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত নেতাদের সঙ্গে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে মতবিনিময়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গত তিনটি সিটি নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি বলব না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। যে নামেই হোক একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই’।
আর এক সপ্তাহ পর ১ আগস্ট শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা চাইলে যেকানো সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।’ তবে একই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে সময়ে নির্বাচন হোক না কেন তা শেখ হাসিনার অধীনেই হবে।’
একই দিন বিকেলে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পাঁচই জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন নির্বাচনের আশঙ্কা রয়েছে তার দলের।’ আর রাতে খালেদা জিয়া জানিয়ে দেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে অনঢ় তাঁর দল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শান্তুনু মজুমদার বলেন, নির্বাচন প্রসঙ্গ সামনে এনে বিএনপির তরফে একটি ‘মাইন্ড গেম খেলা’র চেষ্টা হয়েছে। এতে বিএনপি সফলও হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তাঁর মতে আন্দোলনে ‘ঈদ পরবর্তী পদক্ষেপ’ হিসেবে বিএনপি নির্বাচন প্রসঙ্গ এনেছে। ড. শান্তুনু মজুমদার মনে করেন, ‘গত কয়েক দফায় আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন জনগণের সেন্টিমেন্ট পুঁজি করে নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টায় আছে।’
তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেকোনো মুহুর্তে বদলে যেতে পারে এমন কথা মনে করিয়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা এখন দেখা যাচ্ছে না।’
– প্রিয়ডটকম,ডেস্ক/জাহিদুল ইসলাম জন।
You must be logged in to post a comment.