নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সভিউ:
ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে প্রচুর গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও তা সহজে বাজারে আসছেনা সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে। অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেওয়ার অভিপ্রায়ে টেকনাফের একটি শক্তিশালী অসাধু সিন্টিকেট কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রাখছে। আর এই জন্য দায়ী করা হচ্ছে মুহাম্মদ শরীফ প্রকাশ শরীফ বলি নামক একটি অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে।
ক্রেতাদের দাবী উক্ত সিন্টিকেট পঞ্চাশ হাজার টাকার দামের গরু এক লক্ষ টাকা দাম হাকানোর কারণে অনেকে তা ক্রয় করতে অপরাগ হচ্ছে। ফলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামের বিক্রির ইচ্ছায় ক্রেতাদের চোখে ধুলি দিচ্ছে। শুক্রবার মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমান গবাদি পশু দেশে ঢুকেছে। এনিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে ৩০২১টি গবাদি পশু করিডোরে আসে। তবে প্রতিনিয়ত গবাদি পশু আমদানী অব্যাহত রয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়িত মিয়ানমার গবাদী পশু আমদানীর ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদা পূরন করা অনেকটা সম্ভব হবে, তাছাড়া পশুর সংকট থাকবেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মিয়ানমার থেকে ৬টি ট্রলারে ৫০২টি গবাদি পশু আমদানি করা হয়েছে। তৎমধ্যে ৪৯৩টি রাজস্ব প্রদান করা হয়েছে। অন্যান্য পশুগুলো শনিবার রাজস্ব আদায় করা হবে। তবে গবাদি পশু ব্যবসায়ী কক্সবাজার জেলার সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়া এলাকার মোঃ শরীফ সর্বোচচ ৪২৬টি গবাদি পশু আমদানী করেছে। এ নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের (১৮ দিনে) ৩ হাজার ২১টি গবাদি পশু আমদানী করা হয়। আমদানীকৃত গবাদি পশু থেকে ১৫ লাখ ৯শ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। তাছাড়া আগষ্ট মাসে মিয়ানমার থেকে ৩ হাজার ৫৪টি গবাদি পশু আমদানী করে প্রায় ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৬শ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়।
আমদানীকৃত প্রতি গরু-মহিষ থেকে ৫০০ এবং ছাগল থেকে ২০০ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। তাছাড়া গবাদি পশু আমদানীতে রয়েছে টেকনাফ পৌরসভার শহিদুল ইসলাম, মমংচি, মোঃ আব্দুল্লাহ, শাহপরীরদ্বীপের মৌঃ নূরুল হক, আব্দু শুক্কুর, হোসন আহমদ সহ অনেকেই।
এদিকে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মোঃ শরীফ জানান, কোরবানীর ঈদকে টার্গেট করে মিয়ানমার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার গবাদি পশু আমদানী করা হচ্ছে। করিডোরে আসা গবাদি পশুর দাম সহনীয় পর্যায়ে। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার পশু ব্যবসায়ীরা করিডোর থেকে পশু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কোন সমস্যা না হলে কোরবানের আগে মিয়ানমার থেকে অন্তত ১০ হাজার গবাদি পশু আমদানী করা হবে।
তিনি আরও জানান, তিন বছর ধরে ভাঙ্গা বাঁধের কারনে সাগরের পানি প্রবেশ করে শাহপরীরদ্বীপ যাতায়ত বিছিন্ন। ফলে যাতায়ত ও পশু পারাপারে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া করিডোরে অস্থায়ী ব্যাংক ও কাষ্টমস শাখা না থাকায় সমস্যা পোহাতে হয়। তবে গবাদি পশু আমদানিতে নানা প্রতিবন্ধকতার পরও ঝুঁকি নিয়ে গবাদি পশু আনা হচ্ছে বলে জানায়।
এদিকে শাহপরীরদ্বীপ বিওপি চৌকির কোম্পানী কমান্ডার জজ মিয়া জানান, করিডোরে আসা পশু বোঝাই ট্রলার নিরাপদে পৌছতে বিজিবির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচেছ। গবাদি পশুর ট্রলার আসার সংবাদ বিজিবিকে জানালে বিজিবি নাফনদীসহ সীমান্তে টহল জোরদার করে তা নিরাপদে করিডোরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছেন। তাছাড়া বিভিন্ন জেলার পশু ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের কাস্টমস সুপার হুমায়ুন কবির জানান, কোরবানীর ঈদকে টার্গেট করে মিয়ানমার গবাদি পশু আমদানী করা হচ্ছে। এ করিডোর গবাদি পশু আমদানীর ফলে রাজস্ব প্রাপ্তিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচেছন। তবে প্রতিনিয়ত গড়ে ১৫০ থেকে ৩০০ গবাদি পশু আমদানী হচ্ছে। তবে গবাদি পশু আমদানী অব্যাহত থাকলে এ বছরের কোরবানে চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি। তাই ব্যবসায়ীদের পশু আমদানীতে বেশী উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হামিদুর রহমান জানান, কোরবানের ঈদের চাহিদা পূরণে মিয়ানমার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ গবাদি আমদানি হচ্ছে। শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে গবাদি পশু আমদানির ফলে দেশের পশুর সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তবে পশু আমদানীকারক ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আমদানিকৃত পশু পারাপার ও পরিবহনে যেন কোন সমস্যা পোহাতে না হয় সে ব্যবস্থা পরিষদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
You must be logged in to post a comment.