মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :
১৯৭১ থেকে ২০১৮। স্বাধীনতা অর্জনের ৪৭ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। সেদিনের সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালী এখন ১৭ কোটি ছুই ছুই। উন্নয়ন আর উৎপাদনে বদলে গেছে বাংলাদেশ। সব কিছুতে আধুনিকতার ছাপ। কিন্তু পাল্টায়নি জাতির শ্রেষ্ট সন্তান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও সন্তান আবুলের ভাগ্য। যেই মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিল আজ তার পরিবার অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
বয়সের ভারে কাজ করতে না পারায় আব্দুল হাকিমের স্ত্রী সুফিয়া তার পাগল ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে অর্ধহারে অনাহারে চলে জীবন। এই কি আমাদের স্বাধীনতা? সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আজ এই করুণ দশা! এ লজ্জা আমাদের! মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের পরিবার বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের চিউনি পাড়া এলাকার বসবাস করেন। থাকেন সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে। এ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সরকারীভাবে সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হোক এমনটা প্রত্যাশা সকলের। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সকল সুবিধা দিয়ে তাদের দিয়ে বাচাঁর সুযোগ করে দিবেন এমনটাই আশা করছেন এলাকার সকল জনসাধারণের।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তার স্বামী ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে খুলনা জেলায় মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছর পুর্তি হলেও আজও তার স্বীকৃতি মেলেনি। মুক্তিযোদ্ধো হিসেবে তৎকালীন দেশরক্ষা বিভাগ হতে দেয়া ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র’ সহ সকল সার্টিফিকেট ও পরিচয়পত্র রয়েছে তার স্বামীর। এছাড়া বর্তমানে বসবাসরত বান্দরবান জেলার প্রশাসক এর প্রশংসা পত্রও আছে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের স্ত্রীর হাতে।
সরকারী সহযোগিতার জন্য তিনি বার বার বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিলেও তার কথায় কর্ণপাত করেনি কেউ। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তো দূরের কথা, সরকারী অন্য কোন ভাতাও জোটেনি তার কঁপালে। একদিন ভিক্ষায় বের হতে না পারলে অভুক্তই থাকতে হয় সারাদিন। টাকার অভাবে প্রতিবন্ধী ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট হাতে নিয়েই ভিক্ষা করে সুফিয়া। থাকে সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
এই বিষয়ে লামা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মাহাবুবুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় যখন মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাচাই করে তালিকা প্রনয়ণ করেন তখন সে যোগাযোগ না করায় তার নাম মুক্তি বইয়ে আসেনি। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম না থাকলে সরকারী সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। আব্দুল হাকিম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার স্বীকৃতি মেলেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাচাই প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত আছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই শুরু হলে আব্দুল হাকিমের পরিবারের লোকজন কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ প্রদান করেন।
You must be logged in to post a comment.